তারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের পর আইএস বা আল কায়েদার নামে দায় স্বীকার করে যেসব বার্তা ইন্টারনেটে এসেছে, তা ‘আপলোড’ করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই।
এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশকে সহযোগিতা দিচ্ছেন তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট তানভীর হাসান জোহা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, দায় স্বীকারের বার্তা যে বাংলাদেশ থেকেই ইন্টারনেটে তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা ‘নিশ্চিত’ হয়েছেন। টুইটার কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
“ইতালীয় নাগরিক হত্যায় আইএসের নামে যে বার্তাটি এসেছিল, তা বাংলাদেশের গুলশান থেকেই দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্টসের ব্যবসা করে এমন একটি কারখানার করপোরেট ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। ওই আইএসপির ঠিকানাও সংগ্রহ করা গেছে।”
ঘটনার সময় কে ওই আইপি ঠিকানা ব্যবহার করেছিল করতো তার তথ্য গোয়েন্দারা এখন খুঁজে দেখছেন বলে জানান তিনি।
তানভীর হাসান জোহা বলেন, “ইলেকট্রনিক এভিডেন্সে দেখা গেছে, তারা ‘স্বঘোষিত’ আইএস সদস্য এবং বিভিন্ন সময়ে সৌদি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা তহবিলও সংগ্রহ করেছে। তারা সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় চেজারে তাভেল্লা নামের এক ইতালীয় এনজিওকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি।
দুটি ঘটনার পরই আইএস হত্যার দায় স্বীকার করে বলে খবর দেয় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ মসের মধ্যে ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গত অগাস্টে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, একই দল এসব হত্যাকাণ্ডের পেছেনে রয়েছে বলে তাদের ধারণা।
বিদেশি হত্যার তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখছেন- কারা, কেন হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াত শিবির এতে জড়িত কিনা, তাও দেখা হচ্ছে।”
তানভীর জোহা বলছেন, তাভেল্লা হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস-এর নামে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনায় ‘গুলশান এলাকার’ একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। তবে তাকে গ্রেপ্তার বা আটক দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “বিদেশি নাগরিক হত্যার পর থেকে অনেককেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। একেবারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। গোয়েন্দারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।”
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা এর আগে ব্লগার হত্যার দায় স্বীকারের ‘ইলেকট্রনিক এভিডেন্স’ নিয়েও কাজ করেছেন।
তার দাবি, এই হত্যাকারীদের এক ‘গ্রুপের’ সঙ্গে অন্য ‘গ্রুপের’ যোগাযোগের ‘ইলেকট্রনিক এভিডেন্স’ তারা পেয়েছেন। সিলেটের অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনায় যাদের সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে, তাদের সঙ্গে গুলশানে ইতালীয় নাগরিক হত্যার ‘যোগসূত্র’ পাওয়া গেছে।
ব্লগার নিলয় হত্যার পর দায় স্বীকার করে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (এআইকিউএস) বাংলাদেশ শাখা ‘আনসার আল ইসলাম’ এর নামে ইন্টারনেটে যে বিবৃতি এসেছিল, তা আপলোড হয় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে। একইভাবে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার দায় স্বীকারের বার্তা চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে তোলা হয়েছিল বলে জোহার দাবি।
নিলয়ের খুনিকে শনাক্ত করার ‘সম্ভব হয়েছে’ বলে তিনি দাবি করলেও গোয়েন্দারা এখনই মুখ খুলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিহাদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যা রহস্য উদঘাটনে গোয়েন্দারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। তারা তদন্তকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।”