‘প্রশ্নফাঁস’ তদন্তে বাধা কোথায়, প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের

মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2015, 03:40 PM
Updated : 9 Oct 2015, 03:40 PM

শুক্রবার বিকালে শাহবাগে এক সংহতি সমাবেশে তিনি বলেন, “প্রশ্নপত্র নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। কমিটি গঠন করে এটা তদন্ত করতে বাধা কোথায়?

“এই প্রশ্নফাঁসের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সাথে বড় কর্মকর্তা জড়িত এবং এর পেছনে একটি বড় জাল রয়েছে। তাদের রক্ষা করাই যেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে; কিন্তু এ দায় থেকে জনগণ কখনোই তাদের মুক্তি দেবে না।”

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নেওয়ার দাবিতে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সমাজের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ওই সংহতি সমাবেশ আয়োজন করে।

শিক্ষার্থীরা ‘যেসব প্রমাণ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে’ সেগুলো তদন্ত করার দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, “অবিলম্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দিয়ে যত তাড়াতাড়ি পুনরায় পরীক্ষা নিলে তবে সেটা মঙ্গলজনক হবে।”

“প্রশ্নফাঁসের কথা ওঠার সাথে সাথে যদি একটি তদন্ত কমিটি করা হত, সে কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে কারও রাস্তায় আসার দরকার হতো না। গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তি যদি সেই তদন্ত কমিটিতে থাকতো আমরাও আশ্বস্ত থাকতে পারতাম, মানুষও বিশ্বাস করত।”

প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে বড় একটি বাণিজ্যের জায়গায় পরিণত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, “যে কোনো কাজে ভুল বা অন্যায় হতে পারে। কিন্তু আমাদের শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ স্বীকার না করার প্রবণতা থাকায় তারা কোনো অভিযোগ গুরুত্ব দিতে চায় না।

“ধরা যাক প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, কিন্তু বছরের পর বছর প্রশ্ন ফাঁসের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সে কারণে এবারও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তাই একটি কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করা হোক।”

মেধাবীদের লালন করতে ও প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিমউদ্দিন খান।

“মেধাবীদের লালন না করায় প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষায় পাস করা মেধাহীনদের পক্ষে অবস্থান নেয় রাষ্ট্র। এটা পুরো রাষ্ট্রকে মেধাহীন করার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এ কারণে যারা মেধার লালনে বিশ্বাসী, মেধাবীদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত করতে চায়, তাদেরকে এক কাতারে এসে দাঁড়াতে হবে।”

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পর ১৪ জনের গ্রেপ্তারই প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট মন্তব্য করে ভাস্কর রাশা বলেন, “২১ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছেন।  আপনারা যারা নীতিনির্ধারক আছেন, তারা আসুন, বসুন- প্রমাণ নিয়ে কথা বলি।

“প্রশ্ন ফাঁস যদি না হবে তাহলে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কীসের জন্য?”

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, “কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব যদি কোন দাবি উঠে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কিন্তু তা না করে পুলিশ দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। প্রশ্ন বাণিজ্যের সাথে কারা জড়িত এবং এই বাণিজ্যের টাকা কার পকেটে কত ঢুকেছে আমরা জানতে চাই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, “একসময় পাবলিক পরীক্ষাতে নকল হত আর এখন নকল হয় না, প্রশ্নগুলো আগেই ফাঁস হয়ে যায়। শুধু মেডিকেল নয়, সবক্ষেত্রেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। নতুন পরীক্ষা দিয়ে আপনারা প্রমান করুন, আপনারা ভুল করেছেন, ভবিষ্যতে আর এমন হবে না।”

অভিভাবক প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, “এখানে যে অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা আসছে কেউ বলেনি আমাদেরকে পরীক্ষা ছাড়া মেডিকেলে পড়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তারা বলছে, প্রশ্নফাঁসের যে ঘটনা ঘটেছে আইনের মাধ্যমে তা সমাধান হোক। যে প্রশ্নে পরীক্ষা দেব তা যেন ফাঁস না হয়। টাকার বিনিময়ে যেন প্রশ্ন কেনা না যায়।”

সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হল এবং একজন র‌্যাব হেফাজতে মারা গেল। তাপরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কীভাবে বলেন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি? আমরা র‌্যাব হেফাজতে ইউজিসি কর্মকর্তার মৃত্যুর তদন্তের রিপোর্টও দেখতে চাই।”

প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, “যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মাঠে আছেন, আমরাও তাদের সঙ্গে আছি। আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান, আমরা চাইব প্রধানমন্ত্রীর ঘুম ভাঙ্গুক।”

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার ছেলে ফোন দিয়ে মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাপ সৃষ্টি করছেন।”

সংহতি সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের ডা. রত্না বৈষ্ণব, কুমিল্লা অঞ্চলে আন্দোলনের সমন্বয়ক পাপন পাল, অভিভাবক কামরুজ্জামান প্রমুখ।

শনিবার ‘প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে’

শাহবাগের সংহতি সমাবেশে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ‘প্রমাণাদি’ উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সমাবেশে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, “প্রশ্নফাঁসের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। প্রমাণগুলো আছে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশোতে উপস্থাপন করেছি। গত পরশু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা যেতে চাইলেও পুলিশের বাধায় যেতে পারিনি। এ কারণে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে সেগুলো উপস্থাপন করব।”

একই সঙ্গে শনিবার সকালে পুনরায় শাহবাগ মোড়ের দিকে যাত্রা করার কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

সাইফুল্লাহ জানান, সকাল ১০টায় তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাবেন। এরপর একটি প্রতিনিধি দল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবে।