টেনিস বলের ভেতরে মাদক, চোরাই পকেটে মোবাইল ফোন যায় কারাগারে

কারাবন্দিরা কৌশলে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে মাদকও পাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষের প্রধান সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2015, 11:42 AM
Updated : 8 Oct 2015, 03:03 PM

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কয়েকটি নজির তুলে ধরেন তিনি।

তবে কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার দাবি করেছেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় বন্দিরা বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। যোগাযোগের যে অভিযোগ রয়েছে, তার সুযোগ ঘটে বন্দিদের আদালতে নেওয়ার সময়।

কারাগারে থেকে বিভিন্ন অপরাধীরা বাইরের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ বহুদিনের। বছর খানেক আগে ত্রিশালে জঙ্গিদের পালানোর ঘটনায়ও পরিকল্পনাটি কারাগারেই হয়েছিল বলে অভিযোগ।

কারাগারে বন্দিরা অবৈধভাবে মোবাইল ফোন রেখে এই যোগাযোগ রাখে বলে অভিযোগ উঠছে বারবার। মাদকও কারা অভ্যন্তরে পাওয়ার ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।

রাজধানীর নাজিম উদ্দিন সড়কে কারা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা কর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে পাওয়া মোবাইল ফোন সেট, সিম কার্ড সাংবাদিকদের দেখানো হয়।

সৈয়দ ইফতেখার টেনিস বল, ব্যাগ, ওষুধের কৌটা দেখিয়ে বলেন, “বাহির থেকে দেখলে মনে হবে টেনিস বল। কিন্তু বলের ভেতর মাদক, সিম রয়েছে। বলগুলো বাহির থেকে কারাগারের ভেতরে নিক্ষেপ করা হয়েছে।”

ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, “মনে হচ্ছে ব্যাগটি খালি। আসামির স্বজনরা কাপড় পাঠিয়েছেন তার বন্দির জন্য। কিন্তু ব্যাগের তলানিতে আরেকটি ফলস’ পকেট রয়েছে। ওই পকেটে থেকে মোবাইল পাওয়া গেছে।”

ছোট ওষুধের কৌটা দেখিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “ওষুধ পাঠিয়েছে বন্দির স্বজন। কিন্তু কৌটার ছিপির মধ্যে ফলস’ জায়গা করে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে।”

এসব দেখিয়ে তিনি বলেন, “কারাগারে থেকে যে বন্দিরা বাহিরে যোগাযোগ করে না, তা একেবারে অস্বীকার করছি না। তা নাহলে কারাকর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে মোবাইল ফোন, সিমকার্ড পাওয়া যেত না।”

তবে কারাগার থেকে আদালতে যাওয়ার সময় মাঝপথে বন্দিরা বাইরের কারও সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করে বলে দাবি করেন কারা মহাপরিদর্শক।

কারাগারে বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের অধীন থাকলেও আদালতে আনা-নেওয়ার দায়িত্বটি থাকে পুলিশের হাতে।

কারাপ্রধান ইফতেখার বলেন, “যখন বন্দি কারাগারে ঢোকেন। তাদের ব্রেন তো বাহিরে রেখে আসতে পারি না। পরিকল্পনা করতে পারে। তবে বন্দিদের আদালতের নেওয়ার পথেই সাধারণত বাহিরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হয়।

“একজন আসামিকে সকালে আদালতে নেওয়া হয়। প্রায় সারাদিন আদালতে থাকে। আবার কোনো কোনো আসামিকে অন্য জেলায়ও নিতে হয়।”

‘বন্দি কল্যাণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন’ বিষয়ক ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের লোকবলের কথাও তুলে ধরেন কারা মহাপরিদর্শক।

“আমাদের লিমিটেশন’ রয়েছে। লিমিটেশন হলে জনবল। আমাদের কারারক্ষীরা সাপ্তাহিক ছুটিও পায় না।”

তিনি জনান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৮ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৪ হাজার ৬৮১ জন হলেও বন্দি রয়েছে ৭১ হাজার ২৪১ জন, যা দ্বিগুণেরও বেশি।

এসব বন্দির মধ্যে ৭০ শতাংশর মামলা বিচারাধীন। বাকি ৩০ শতাংশ কয়েদি বলে জানান কারাপ্রধান।

কেরানীগঞ্জ কারাগার উদ্বোধন অচিরেই

চলতি বছরের ১৫ নভেম্বরের পর যে কোনো দিন  কেরানীগঞ্জে নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন কারা-মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পিডাব্লিউডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৫ নভেম্বরের পর যে দিন তারিখ দিবেন, সেই তারিখে কেরানীগঞ্জের কারাগার উদ্বোধন করা হবে।”