রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাদ দিন, প্রধানমন্ত্রীকে সেলিম

সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে পরিবেশের ক্ষতি হবে মন্তব্য করে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2015, 07:50 PM
Updated : 11 Oct 2015, 12:30 PM

বুধবার ঢাকায় সিপিবি-বাসদের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই বামপন্থি নেতা বলেন, “তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি ও সিপিবি-বাসদ সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতির বিষয়টি নাকচ করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ দিচ্ছি। প্রয়োজনে আপনারা প্রতিনিধি পাঠান, আমাদের লোকও সেখানে যাবে। এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উন্মুক্ত বিতর্ক হতে পারে।”

২০১৩ সালের অক্টোবরে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনাও করেন তিনি।

“যারা রামপাল নিয়ে চেঁচামেচি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে; তাদের বলছি, রামপালের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না। দেশের ক্ষতি করে কোনো কাজ শেখ হাসিনা করবে না,” বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এর দুই বছর পরেও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে ঢাকা থেকে সুন্দরবনমুখী অভিযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি ও বাসদ।

সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে নতুন প্রকল্প আমরাও চাই। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি পরিবেশ ধ্বংস হয় তবে সে বিদ্যুতের উপকার কতটুকু? ভারতের এনটিপিসি, বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী কারখানা মালিকরা এর লাভ ভোগ করবে। বিনিময়ে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের পাঁচ লাখ মানুষের জীবিকা আর কোটি কোটি মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হবে।

“রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হাজার হাজার টন সালফার, নাইট্রোজেন, ছাঁই ও কয়লা ধোয়া পানি নিঃসরণ করবে। এসবের ফলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে পরিবেশের।”

তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্য পথ প্রধানমন্ত্রী না দেখলে আমাদের পরামর্শ নিতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে রাজি আছি।

“বিদ্যুৎ অনেকভাবে উপাদন করা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক স্থানেই স্থাপন করা যায়। কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস হলে তা আবার সৃষ্টি করা যাবে না। জনগণের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই।”

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই পুরস্কারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সুন্দরবন নষ্ট হলে বিশ্ব জনমত বলবে- তার পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়া হোক। তাকে পরিবেশ ধ্বংসকারী হিসাবে ঘোষণা করা হোক।”

ঢাকা-সুন্দরবন অভিযাত্রা

সংবাদ সম্মেলন থেকে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর ঢাকা-সুন্দরবন অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিপিবি-বাসদ নেতারা।  

১৩ অক্টোবর বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ এবং সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যায় সাভার বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ হবে।

পরদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে। এভাবে গোয়ালন্দ, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, যশোরের বিভিন্ন স্থানে, খুলনার হাদিস পার্ক, কাটাখালীতে পথসভা হবে। পরে ১৭ অক্টোবর বাগেরহাটে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে অভিযাত্রার শেষ হবে।