এমপি লিটনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা

শিশুর পায়ে গুলি করার অভিযোগ নিয়ে অপ্রকাশ্যে থাকা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে ভাংচুর ও লুটপাটের একটি মামলা হয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2015, 05:07 PM
Updated : 7 Oct 2015, 05:31 PM

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামের হাফিজার রহমান।

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত রোববার এজাহারটি দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে মঙ্গলবার রাতে এটি নিয়মিত মামলা হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে।

মামলায় সংসদ সদস্য লিটনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে ওসি জানান।

মামলা নিতে দেরির কারণ জানতে চাইলে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এখন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”

হাফিজার বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায়’ রোববার রাতে তার বাড়িতে ভাংচুর চালান লিটন ও তার অনুসারীরা।

“এমপি লিটন নিজেই উপস্থিত থেকে স্বভাবসুলভভাবে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে প্রথমে আতঙ্ক তৈরি করেন। এরপর তার অনুসারীরা ভাংচুর চালায়। ঘরের টিন ও মালামাল খুলে নেয় তারা।”

স্থানীয়রা জানান, এমপির আক্রোশের শিকার হাফিজার পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।

ঘটনার পর গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্ধ্যায় সংসদ সদস্যের হিমাগার থেকে টিন ও বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে হাফিজারকে ফেরত দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই মিলটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এমপির হিমাগার থেকে টিন ও আসবাবপত্র উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলাম।”

এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি স্থানীয় প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।   

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটনের ছোড়া গুলিতে শুক্রবার ভোরে সৌরভ মিয়া (৯) নামে একটি শিশু আহত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটি বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ গ্রামের সাজু মিয়া তার ছেলেকে গুলির অভিযোগে গত শনিবার রাতে লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

ওই ঘটনার পর লিটনের লাইসেন্স করা অস্ত্র দুটি সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা দেন তার স্ত্রীর বড় ভাই তারিকুল ইসলাম। এরপর রোববার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিটনের অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিল করেন।

লিটনের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন

কিন্তু এখন পর্যন্ত লিটনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে গাইবান্ধায়।

এদিকে বুধবার সুন্দরগঞ্জের সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির একটি শোভাযাত্রা এমপি লিটনের সমর্থকদের তৎপরতায় ভণ্ডুল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

প্রধানমন্ত্রীর ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দি আর্থ’ পুরস্কার অর্জন এবং সৌরভকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে এই কর্মসূচি ডেকেছিল সন্ত্রাস ও নাশকতা  প্রতিরোধ কমিটি।

উপজেলা সদরের বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকায় দুপুরে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলার সময় স্টেশনের পূর্ব পাশে এমপি লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তার সমর্থকরা জড়ো হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন পুলিশ কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়।

শোভাযাত্রার আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিষ্ণুরাম দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমপির ক্যাডার বাহিনী বামনডাঙ্গা এলাকায় মোটর সাইকেলে করে অস্ত্রসহ মহড়া দেয় এবং আমাদের হুমকি দেয়। গতকাল রাত থেকেই তারা আমাদের আনন্দ র‌্যালি ভণ্ডুল করার হুমকি দিচ্ছিল। এরপর পুলিশ আটকে দেয় কর্মসূচি।”

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ইসরাইল হোসেন এই বিষয়ে বলেন, “এই থানাটি মূলত জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা। মিছিল, মিটিং, সমাবেশকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির চক্র জড়িয়ে পড়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে কোনো কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি চা দোকানে থাকা অবস্থায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সামিউল ইসলাম সামুর কোমরে রাখা পিস্তলের এই ছবি স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে বুধবার বিকালে সুন্দরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত লিটনের পক্ষে একটি  মিছিল হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সামিউল ইসলাম সামু, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সাকিদার ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম।

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি চা দোকানে থাকা অবস্থায় সামুর কোমরে রাখা পিস্তলের একটি ছবি স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে সামু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে কোনো অস্ত্র নেই। তবে যদি এধরনের কোনো ছবি থেকে থাকে, তা অনেক আগের। এমপি লিটন সাহেবের সঙ্গে অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। তিনি মাঝে মাঝে তার অস্ত্র আমার কাছে রাখতে দিতেন। এটা সেই সময়ের ছবি হতে পারে।”

লিটনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল, তাকে গ্রেপ্তার এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সুন্দরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু চত্বরে পৌর নাগরিক সংগ্রাম পরিষদ, আওয়ামী লীগের একাংশ ও স্থানীয় জনতার উদ্যোগে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে গণ স্বাক্ষরের ব্যানারগুলো কে বা কারা সরিয়ে নিয়ে গেছে বলে আয়োজকরা জানান।