সংসদ গ্রন্থাগার ব্যবহার করেন না এমপিরা

জাতীয় সংসদের লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের ৮৫ হাজারের বেশি বই, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নাল-সাময়িকী নিয়মিত রাখা হলেও পারতপক্ষে সে মুখো হন না সংসদ সদস্যরা।   

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 03:45 PM
Updated : 6 Oct 2015, 03:57 PM

দশম সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই একবারের জন্যও যাননি তাদের জন্য করা বিস্তৃত পরিসরের সুসজ্জিত এই গ্রন্থাগারে। আর যারা গিয়েছেন তাদের অনেকেই চলে গেছেন পত্রিকা পড়েই।

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরুর পর দশম সংসদ মেয়াদের প্রায় অর্ধেক পার করতে চললেও এখন পর্যন্ত গ্রন্থাগারে গিয়েছেন ১১২ জন সংসদ সদস্য। আর একবারের জন্যও যাননি ২৩৮ জন।

গ্রন্থাগারে যাওয়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম গিয়েছেন একাধিকবার। অনেকেই একদিন গিয়ে আর যাননি।

দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠক থেকে গত ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত সংসদ গ্রন্থাগার ব্যবহারের এই তথ্য দিয়েছে সংসদ সচিবালয়।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংসদ গ্রন্থাগার থেকে এখন পর্যন্ত বই নিয়েছেন মাত্র ৫৩ জন।

গ্রন্থাগার ব্যবহার করা সংসদ সদস্যদের মধ্যে মন্ত্রী রয়েছেন ১৩ জন। তারা হলেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এবং পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ ইসলাম জ্যাকব।

গ্রন্থাগার থেকে বই নেওয়াদের মধ্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদও রয়েছেন।

এছাড়া আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন সংসদীয় কমিটির সভাপতিও বই নিয়েছেন।

গত মে মাসে সংসদের আইপিডি কনফারেন্স সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের লাইব্রেরি ব্যবহার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ডেপুটি স্পিকার।

সংসদের লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বী সেদিন বলেন, “আমাদের লাইব্রেরি খুব সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের অনেক মাননীয় সদস্য... ... কোনও মাননীয় সদস্য এটা ব্যবহার করেন না। এত মাইক্রোসকপিক পার্সেন্টেজ লাইব্রেরি ব্যবহার করেন!।”

গ্রন্থাগারের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অধিবেশন চলাকালে গ্রন্থাগারে সংসদ সদস্যদের যাতায়াত বাড়ে। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাজেট-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে বছরের প্রথম অধিবেশন ও বাজেট অধিবেশনে গ্রন্থাগারে সদস্যদের উপস্থিতি বেশি থাকে।

“গ্রন্থাগারে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই শুধু পত্রিকা পড়ে চলে গেছেন। অনেকে মাত্র একদিন এসেছেন,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সংসদের সদস্যদের একটা বড় অংশেরই ক্যারিয়ার হিসেবে পলিটিক্স নেই। ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ানরা ফুল টাইম রাজনীতি করেন, আর আমাদের এখানে পার্ট টাইম। সেজন্য ব্যয় করার মত সময় তাদের নাই।”

এছাড়া জাতীয় সংসদে বিতর্ক ‘না হওয়া’ও সাংসদের লাইব্রেরিতে না যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।

“বিরোধী দল কি আছে? বিরোধী দল যদি কোনো কিছু নিয়ে কাউন্টার প্রস্তাব দিত তাহলে না ডিবেট হত। বিতর্কের প্রয়োজনে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাইব্রেরির প্রয়োজন হত,” বলেন তিনি।.