খিজির খান খুন: সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ

ধর্মীয় মতাদর্শিক বিরোধ, না কি ব্যবসায়িক কোনো দ্বন্দ্ব- এসব নানা বিষয় মাথায় রেখে মুহম্মদ খিজির খান হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 03:16 PM
Updated : 8 Oct 2015, 01:44 PM

নিহতের ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

এতে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে বাড্ডা থানার এসআই খান নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

দুপুরে ময়না তদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে লাশ গ্রহণ করেছেন নিহতের ভাগ্নে বিআইডিসির সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতেই কুষ্টিয়ায় নিয়ে বুধবার পারিবারিক কবরস্থানে মামাকে দাফন করবেন তারা।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগরের পীর হাবিব রহমত উল্লাহর ছেলে খিজির খান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান। তার মৃত্যুতে এলাকায় মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাবা মারা যাওয়ার পর রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় নিজের বাড়িতে খানকা শরীফ গড়ে তুলে মাহফিল করতেন অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা। তাকেও পীর মানতেন তার বাবার অনেক মুরিদ।

সোমবার সন্ধ্যায় সেই খানকা শরীফেই একদল দুর্বৃত্ত গলা কেটে হত্যা করে খিজির খানকে। ছয় তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবারের সবাইকে বেঁধে তাকে আনা হয়েছিল দোতলার খানকা শরীফে।

এক বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকার রাজাবাজারের বাসায় একইভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। তার আগের বছর গোপীবাগে খুন করা হয় কথিত পীর লুৎফর রহমানকে

মতাদর্শিক বিরোধের কারণে জঙ্গিবাদীরাই ওই দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই খুন হলেন খিজির খান।

খিজির খানের বাড়ি, যেখানে খুন হন তিনি

তার সঙ্গে এলাকায় কারও কোনো বিরোধের খবর স্থানীয়রা দিতে পারেনি। তিনি কোনো রাজনৈতিক দল করতেন না বলেও স্বজনরা জানিয়েছে।

ডিএমপির গুলশান জোনের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

“জঙ্গি সংযোগ, ধর্মীয় মতবিরোধ, ব্যক্তিগত বিরোধ, কোনো ধরনের ব্যবসায়িক বিরোধ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করেছে কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।”

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, নিচ তলার গুদাম ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দুর্বৃত্তরা ঢুকে ১৫ মিনিটের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে যায়।

খুনির সংখ্যা কেউ বলছেন ৫ থেকে ৬ জন, কেউবা বলছেন ১২ থেকে ১৪ জন। ভাগ্নে মাহবুব নিহতের স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, খুনিদের একজনের হাতে পিস্তল ছিল, কয়েকজনের হাতে ছিল চাপাতি।

হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে খিজির খানের স্ত্রী, ছেলের বৌ এবং দুই নাতি ছিলেন, বাড়ির ফটক খুলে দিয়েছিলেন তাদের গাড়িচালক। সবাইকে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে মাহবুব জানান।

নিহতের বাবার মুরিদ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ খাইরুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছিলেন না খিজির খান। বিভিন্ন সময়ে কুরআন শরিফের আয়াত এবং সূরা তিনি মাহফিলে ব্যাখ্যা করতেন।

কুষ্টিয়ার ফিলিপনগরে খিজির খানের খানকা শরীফ

কুষ্টিয়ার ফিলিপনগরবাসী ধর্মভীরু হিসেবেই চেনেন খিজির খানকে। তাদের ধারণা, জঙ্গি গোষ্ঠী তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তিরও দাবি করছেন তারা।

খিরিজের ছোট ভাই ইলিয়াস খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কোরবানির ঈদের একদিন আগে তিন দিনের জন্য গ্রামে ফিরেছিলেন তার ভাই।

“বেশিরভাগ সময় ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকলেও গ্রামের মানুষের কষ্ট লাঘবে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখতে বেরিয়েছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলার জন্য। সেসময় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপে জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কার কথাও বলেছিলেন তিনি।”

গ্রামের বাড়িতেও তিনি গড়ে তুলেছিলেন রহমতিয়া খানকা শরিফ। খাদেম আব্দুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এখানে প্রতি সপ্তাহেই মাহফিল হয়।

কুষ্টিয়াসহ সারাদেশে খিজির খানের অনেক মুরিদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুফি দর্শনে বিশ্বাসী হওয়ায় কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না তার।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খিজির খান যেমন ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক তেমনি ছিলেন ধার্মিক ও পরোপকারী। এলাকার উন্নয়নেও তিনি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করতেন।”