মঙ্গলবার মাসিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গবেষণা) শামসুল আরেফিন, পরিচালক নূর আহমদ ও বেলাল হোসেন।
প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে স্পষ্টত বিব্রত শামসুল আরেফিন প্রসঙ্গ পরিবর্তনের অনুরোধও করেন সাংবাদিকদের।
চার বছর অনুসন্ধানের পর গত মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ১৫৬ জনকে আসামি করে মোট ৫৬টি মামলা করে দুদক।
আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাকিরা ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। কোনো মামলায় আসামির তালিকায় নেই ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কিংবা পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ের আগে সাংবাদিকদের হাতে যে কাগজ দেওয়া হয়, তাতে গত সেপ্টেম্বরের বিভিন্ন মামলার সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকলেও বেসিক ব্যাংকের মামলা নিয়ে কোনো তথ্য ছিল না।
শুরুতেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে দুদকের মহাপরিচালক আরেফিন বলেন, “আসলে এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। সংশোধন করা হবে।”
মামলায় আব্দুল হাই এবং পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যকে কেন আসামি করা হয়নি- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আসলে অনুসন্ধানে আমাদের কিছু লিমিটেশনস থাকে। আমাদের কাছে যে কাগজপত্র ছিল তার ভিত্তিতেই মামলা করা হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে বিষয়টি বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে।”
বেসিক ব্যাংক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ঋণ কেলেঙ্কারিতে শেখ আব্দুল হাইয়ের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
দুদকের অনুসন্ধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন আমলে নেওয়া হয়েছিল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, “মাত্র তো অনুসন্ধান শেষে মামলা হল, মামলা পরবর্তী তদন্ত তো এখনও বাকি।”
এই বিষয়ে আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে গলদঘর্ম দুদক কর্মকর্তাদের কাছে শেষে জানতে চাওয়া হয়- আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে কি না?
‘আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে,” বলেই দুদক মহাপরিচালক আরেফিন বলেন, “এ বিষয়ে আর কিছু নয়। অন্য প্রশ্ন করুন প্লিজ।”
বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর এই তিন শাখা থেকে ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে।
ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন করাতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি সঙ্কটে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপর সরকার ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল ইসলামকে বরখাস্ত করে। তারপর চেয়ারম্যান আব্দুল হাই পদত্যাগ করেন।
এ ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে ২০১২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালের শুরুর দিকে পুনরায় অনুসন্ধান শুরু হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে মামলা হয়।