সারা দেশে বিদেশিদের নিরাপত্তা চান কূটনীতিকরা

বাংলাদেশে এক ইটালীয় ও এক জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে সার্বিক নিরাপত্তার আয়োজন জেনে নিয়ে সরকারকে সারা দেশেই বিদেশিদের নিরাপত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন কূটনীতিকরা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 12:09 PM
Updated : 6 Oct 2015, 06:09 PM

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর ঢাকায় কূটনীতিক কোরের ডিন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন,  “বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।”

‘সারা দেশে বিদেশিদের’ নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়েই কথা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “সবকিছুতে তারা (কূটনীতিকরা) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বলেছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা তাদের নিশ্চিত থাকতে বলেছি, তাদের আশ্বস্ত থাকতে বলেছি। কেনো দ্বিধা বা সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়। শুধু কূটনৈতিক এলাকা নয়, প্রত্যন্ত এলাকাতেও বিদেশিরা আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকেন। আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।”

বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার বিদেশি নাগরিকের ‘বিশেষ’ নিরাপত্তার জন্য সরকার তাদের বাসস্থান ও কর্মস্থল চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে ব্রিফিংয়ের আগেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।  

২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় চেজারে তাভেল্লা নামের এক ইতালীয় এনজিওকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি।

দুটি ঘটনার পরই আইএস হত্যার দায় স্বীকার করে বলে খবর দেয় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।   

সরকার বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করলেও যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাফেরায় সতর্কতা জারি করে। হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে জাপানযুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এদিকে পর্যটন ও রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরাও বিদেশি হত্যার ঘটনায় বিরূপ প্রভাব পড়ার  আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের হস্তক্ষেপ চান।  

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে আসেন পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের পাশাপাশি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিদেশিদের জন্য সরকারের নেওয়া নিরাপত্তার আয়োজন সম্পর্কে ৪৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানদের অবহিত করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রিফিংয়ে মন্ত্রীরা বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার কথা কূটনীতিকদের জানিয়েছেন। মন্ত্রীরা বলেছেন, সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে, যাতে তারা যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।    

“বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও তারা দিয়েছেন।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগের বিষয় যে, বিশ্বে যখন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করা হচ্ছে, যেমনটি আমরা গত সপ্তাহে জাতিসংঘ অধিবেশনেও দেখেছি, এমন এক সময়ে একটি পক্ষ আবারও বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের অর্জন নষ্ট করতে অস্থিথিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।”    

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের অবহিত করেন এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।    

“মন্ত্রীরা জানান, একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে যে খবর এসেছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার অবগত। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়গুলো দেখছে।”

ব্রিটিশ হাই কমিশনার সহিংস জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র প্রশংসা করেন এবং হত্যার ঘটনার পর সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেজন্য জাপানের রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।  

পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহা পরিচালক ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিং শেষে বেরিয়ে রবার্ট গিবসন বলেন, “যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলেছি।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে উদ্ধৃত করে হাই কমিশনার বলেন, সন্ত্রাসবাদ সবার জন্যই হুমকি; সুতরাং সবাই মিলেই এর সমাধান করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তার যে ব্যবস্থা করেছে, তাতে তারা ‘আশ্বস্ত বোধ’ করছেন। তবে সারা দেশেই নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন।

কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের পর আইএসের ‘দায় স্বীকার’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “আইএসের কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি, তা জানিয়েছি। কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমরা পাইনি।

“মার্কিন রাষ্ট্রদূত গতকাল বলেছেন, আজও বলেছেন, তারা চেষ্টা করছেন… এটা ঠিক কি না, এটা সম্পর্কে আর কিছু পাওয়া যায় কিনা।”

বাংলাদেশ ভ্রমণ বিষয়ে বিভিন্ন দেশ যে সতর্কতা দিয়েছে, তা প্রত্যাহারের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “মাত্র কয়দিন হল জারি করেছে, আর মিটিংতো আজকে করলাম, ব্যবস্থা করতেতো সময় লাগবে।”