ঢাকায় ঘরে ঢুকে গলা কেটে হত্যা পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যানকে

রাজধানীতে পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মুহ্ম্মদ খিজির খানকে ঘরে ঢুকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 04:16 PM
Updated : 14 Oct 2015, 05:13 AM

কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা জানা যায়নি। নিজের বাড়িতে একটি খানকা শরীফ ছিল তার, তাকে অনেকে পীর মানত।

মধ্য বাড্ডার বাড়িতে সোমবার সন্ধ্যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত ঢুকে খিজির খানকে খুন করে পালিয়ে যায় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

ছয় তলা ভবনের মালিক খিজির খান (৬৮) পরিবার দিয়ে তৃতীয় তলায় থাকেন। দোতলায় রয়েছে তার রহমতিয়া খানকা শরীফ। সেখানেই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

ওই ভবনের সামনে মুদি দোকানি মো. ওয়াহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ৫/৬ জন ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

পাশের একটি লন্ড্রি দোকানের কর্মী আবুল কালাম ঘটনার পরপরই ওই বাসায় ঢোকেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খিজির খানের লাশ বাথরুমে পড়ে ছিল। হাত-পা ছিল বাঁধা, গলা কাটা।

বাড়ির সামনে ভিড়

বের করা হচ্ছে লাশ

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনার পরপরই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ৫/৬ জনের একটি দল এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কী উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে খিজির খানের স্ত্রী, ছেলের বৌ এবং দুই নাতি ছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ডিএমপির গুলশান জোনের উপকমিশনার মোশতাক আহমেদ।

তিনি বলেন, “তিন তলায় তাদের হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে দ্বিতীয় তলার মাহফিল ঘরে তাকে হত্যা করা হয়।

“আমরা এখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। হাত-পা বাঁধা স্বজনদের উদ্ধারের পর তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে অন্তত ৪ থেকে ৬ জন অংশ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।”

বাড়ি থেকে কিছু খোয়া গেছে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায়

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ৫/৬ জনের একটি দল এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কী উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

এক বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকার রাজাবাজারের বাসায় একইভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে

তার আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর গোপীবাগে খুন করা হয় কথিত পীর লুৎফর রহমানকে

দুটি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা গোয়েন্দারা করতে না পারলেও তাদের ধারণা, মতাদর্শিক বিরোধের কারণে জঙ্গিবাদীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

গত কয়েক বছরে কয়েকজন ব্লগার ও লেখকও বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাদের খুনের পেছনেও জঙ্গিদের সন্দেহ করা হয়।

তবে সম্প্রতি ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বাড্ডায় খুন হলেন প্রকৌশলী খিজির খান। তবে বিদেশিদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

বিদেশি হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল আইএসকে জড়িত বলে দাবি উঠলেও তা সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করা হয়েছে।

খিজির খানের বাড়ি

নিহত খিজিরের বাবার নাম হাবিব রহমত উল্লাহ। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি পীর ছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে তিনি মারা যাওয়ার পর পীরের ছেলে হিসেবে খিজির খানের শিষ্যত্ব নেন মুরিদরা।

খিজিরের বাবার মুরিদ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ খাইরুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৭৩ সাল থেকে উনার সঙ্গে পরিচয়। প্রায় প্রতিমাসে এখানে মাহফিল হত। গাজীপুর থেকে আমি নিয়মিত অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতাম।”

খিজির খান কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছিলেন না বলে জানান খাইরুল্লাহ। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে কুরআন শরিফের আয়াত এবং সূরা উনি মাহফিলে ব্যাখ্যা করতেন।

এই ঘরেই হত্যা করা হয়

খিজিরের বাড়ির পেছনের বাড়ির বাসিন্দা এস এ মাহমুদ (২২) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার দাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন খিজির দাদা। আমার দাদা গত কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ার পর খিজির দাদুও যখন কোনো মাহফিলে আমাদের দাওয়াত দিতেন, আমরা অংশ নিতাম।”

তার চাচা এস এ আতিকের মাধ্যমে প্রথমে এলাকাবাসী এ হত্যার ঘটনাটি জানতে পারে বলেও জানান মাহমুদ।

এই যুবক বলেন, “ঈদের ছুটিতে বাড়ির প্রধান দারোয়ান দেশের বাড়িতে গিয়েছিল। বাড়ির নিচতলা গোডাউন হিসেবে ভাড়া নিতে কয়েকজন লোক বাসায় নক করলে ড্রাইভার মূল গেটটি খুলে দেন। এরপর ড্রাইভারকে নিয়ে তারা ৩ তলায় যান। তারপর বাসায় ঢুকে করে বাড়ির ভিতরে থাকা তার স্ত্রী, অন্যান্য স্বজন ও ড্রাইভারকে হাত-পা বেঁধে খিজির সাহেবকে দুই তলায় এনে হত্যা করা হয়।”  

প্রত্যক্ষদর্শী একজন এবং পুলিশ খুনির সংখ্যা অন্তত সাতজন বললেও খিজির খানের স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তার ভাগ্নে বিআইডিসির সহকারী পরিচালক ড. মাহবুব আলম বলছেন, হত্যাকারীরা ১০-১২ জন ছিল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা ঘরে ঢুকে সবার হাত-পা বেঁধে মামাকে (খিজির খান) দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।”

বাসায় ঢোকার ১৫ মিনিটের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা চলে যায় বলে জানান মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, খুনিদের মধ্যে একজনের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল বলে মামীর কাছে শুনেছেন তিনি। অন্যরা ছিল ক্লিন শেভড।

“তারা কেউ শার্ট, কেউ গেঞ্জি পরে এসেছিল। একজনের হাতে পিস্তল ছিল, কয়েকজনের হাতে ছিল চাপাতি।”