বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে যাব, এই প্রতিজ্ঞা: শেখ হাসিনা

জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 12:58 PM
Updated : 5 Oct 2015, 03:28 PM

জাতিসংঘ সফরে ‘চ্যাম্পিয়ান্স অফ দি আর্থ’ পুরস্কার নিয়ে ফেরার পর সোমবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই অঙ্গীকার করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে উন্নয়নের কর্মসূচি আমরা নিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করে আমাদের এই ভূ-খণ্ড, এই বাংলাদেশকে যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।

“আমাদের এই ভূখণ্ড, সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। আজকে যারা শিশু তাদের জন্য বাসযোগ্য একটা দেশ করে দিয়ে যাব। এটাই আমার আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা।”

সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশের প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনার এই অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাজায় দুই সিটি করপোরেশন। মঞ্চের চারপাশে রাখা টবে ছিল নানা ধরনের গাছ, মঞ্চের সাজসজ্জাতেও ছিল লতা-পাতার ব্যবহার।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আসার ঘণ্টা দুয়েক আগে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এরপর বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সবুজ যানবাহনের প্রতীক হিসেবে একদল বাই-সাইকেল আরোহীর প্রদর্শনী হয়। তারপর নানা ধরনের দেশাত্মবাধক গানের সঙ্গে নাচও ছিল।

‘চ্যাম্পিয়ান্স অফ দি আর্থ’ পুরস্কার নিচ্ছেন শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

অনুষ্ঠানে দুটি শিশু প্রধানমন্ত্রীকে মানপত্র পড়ে শোনান।

শেখ হাসিনা পরিবেশের ভারসাম্য রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর উপর গুরুত্ব দেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ নানাভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের যা করার, তা করে যাচ্ছি।”

এসময় উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সবুজ রক্ষা করতে হবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে, আবার অন্যদিকে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে তার দেশে ফেরার দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, “প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছিলাম। যখন ফিরে এলাম, লাখো মানুষের ভিড়। আমি খুঁজে পাইনি হারানো বাবা-মা, ভাইদেরকে।

“এই বাংলার মানুষের মধ্যেই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার পিতার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। যা কিছু পুরস্কার সবকিছুই উৎসর্গ করে দিচ্ছি বাংলার জনগণের জন্য। কারণ বাংলার জনগণই এর একমাত্র দাবিদার। এই বাংলার মানুষের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি সদা প্রস্তুত।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ট্রাজেডির পর তার দেশে ফেরার একমাত্র লক্ষ্যই ছিল এদেশের মানুষের জীবন-মানের উন্নতি করা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার বাবা একটা সুন্দর দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। উন্নত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।

“যারা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে সেই জাতি মাথা নিচু করে চলবে, তা কখনও হতে পারে না। তাই এই বাঙালি জাতি যেন বিশ্বসভায় মর্যাদার আসন পায়, সেটাই আমার লক্ষ্য।”

“আমার বাবা দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, তার কাছ থেকেই এই দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি। দেশের মানুষের জন্যই আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি।”

স্বজন হারানোদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন, “নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবসা দিয়ে গেলাম তাই।”

এরপর ত্যাগ স্বীকারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি পড়েন, “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই, ভয় নাই ওনে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”