কুনিও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি নেই

তিন দিনেও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওর কোনো খুনিকে চিহ্নিত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

আশিক হোসেনও শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 12:07 PM
Updated : 5 Oct 2015, 12:11 PM

বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই, সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় সোমবার বলেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির।

ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পর গত ২ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও। তাভেল্লার খুনিদের কাউকেও এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

তাভেল্লার মতোই গুলি চালিয়ে কুনিওকে হত্যা করে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। কুনিওর খুনি তিনজন ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

কুনিওর হত্যাকাণ্ডস্থলে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। 

ডিআইজি হুমায়ুন বলেন, “আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে। তবে গণমাধ্যমের সামনে বলার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। কোনো অগ্রগতি হলে সেটা পরে জানানো হবে।”

বাংলাদেশে এই দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দল আইএস স্বীকার করেছে বলে দাবি উঠেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এই দলটির কোনো তৎপরতার খবর নাকচ করেছেন। 

৬৬ বছর বয়সী কুনিও বাংলাদেশি একটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে এসে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় একটি ঘাসের খামার করছিলেন। ওই খামারে যাওয়ার পথে খুন হন তিনি। 

ডিআইজি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি ২০১১ সাল থেকে তিনি রংপুরে যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ ২৮ অগাস্ট তিনি এখানে আসেন।”  

জাপানি এ নাগরিক আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও অবিবাহিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

কুনিও হোশি

রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কুনিও। জাকারিয়ার দুই ভাই জাপানে থাকেন।

পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন বলেন, জাকারিয়া বালার ছোট ভাই মিশনের জাপানে হোটেলের ব্যবসা আছে। সেই হোটেল মাঝে মাঝে খেতে যেতেন কুনিও। সে সূত্রেই মিশনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, যার সূত্র ধরে তিনি রংপুরে আসেন।

ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের চলাফেলায় সতর্কতা জারি করেছে। নিরাপত্তার বন্দোবস্তু করা হয়েছে বলে পুলিশও জানিয়েছে।   

রংপুরে বর্তমানে ২৮৬ জন এবং দিনাজপুরে ৫১২ জন বিদেশি রয়েছেন জানিয়ে ডিআইজি হুমায়ুন বলেন, তাদের নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন তারা।

রোববার ময়নাতদন্তের পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয় কুনিওর লাশ।

যে কোনো সময় জাপানি প্রতিনিধিদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে লাশ হস্তান্তরের সব ধরনের আইনগত সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ করা হয়েছে এবং নির্দেশনা রংপুর পুলিশ সুপার ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককেও জানানো হয়েছে।”

ঢাকা থেকে জাপানি দূতাবাসের প্রতিনিধি দল পৌঁছালেই লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।  

জাকারিয়া হাসপাতালে

কুনিও হত্যাকাণ্ডের পর তার বাড়িওয়ালা জাকারিয়াকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। তিনি অসুস্থ হয় পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ডিআইজি হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখনও তাকে (জাকারিয়া) জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তিনি সুস্থ হলে তার সঙ্গে কথা হবে। এতে কুনিও সম্বন্ধে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”

জাকারিয়া বর্মানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।

তিনি চার বছর আগে জাপানে গিয়েছিলেন। এরপর ছোট দুই ভাই মিলন ও মিশনকেও নিয়ে যান। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। অন্য দুই ভাই থেকে যান ওই দেশটিতে।

এই স্থানেই খুন হন কুনিও হোশি

চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে আসার পর রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন কুনিও।

জাকারিয়ার পাশাপাশি আরও পাঁচজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সংখ্যা বললেও তাদের সবার নাম বলেনি পুলিশ।

জাকারিয়ার শ্যালক হিরা, রিকশাচালক মোন্নাফ মিয়া, হত্যাকাণ্ডস্থল আলুটারি গ্রামের ‍মুরাদ হোসেন, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদুন নবী খান বিপ্লব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

জাকারিয়াকে হাসপাতালে পাঠানোর পর পাঁচজনকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের ফেরত পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা।

রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কাউকে আটক করিনি, শুধু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”

কুনিও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি।