পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি চিকিৎসার নোবেলে

গোলকৃমি ও ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 10:25 AM
Updated : 5 Oct 2015, 02:13 PM

সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে চলতি বছরের এই তিন নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।

এর মধ্যে আইরিশ উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল ও জাপানি সাতোশি ওমুরা নোবেল পেয়েছেন গোলকৃমির পরজীবী সংক্রমণের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য।

আর চীনা বিজ্ঞানী ইউইউ তু নোবেল পেয়েছেন নতুন একটি ওষুধ আবিষ্কারের জন্য, যা ম্যালেরিয়া চিকিৎসার ধরন বদলে দিয়েছে।

নোবেল কমিটি বলেছে, এই তিন বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এ রোগের জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম পরজীবীর সংক্রমণে অসুস্থ হচ্ছেন আরও কয়েক কোটি মানুষ। 

আর গোলকৃমির সংক্রমণে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ফাইলেরিয়া ও রিভার ব্লাইন্ডনেসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এই দুই ধরনের পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দীর্ঘদিন সীমিত অগ্রগতির পর আইভারমেকটিন ও আর্টেমিসিনিন নামের দুটি নতুন ওষুধ তৈরির মধ্য দিয়ে এসব রোগের চিকিৎসায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটে।

চীনের একাডেমি অব ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের প্রধান অধ্যাপক ইউইউ তু।

১৯৫৫ সালে বেইজিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর ইউইউ তু ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় আরও কার্যকর ওষুধ খুঁজতে শুরু করেন। আর এ কাজে তিনি শরণ নেন চীনের প্রাচীন হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতির। 

আর্টেমিসিয়া এনুয়া নামের একটি গাছের নির্যাস নিয়ে পরীক্ষা করে তিনি দেখতে পান, ম্যালেরিয়ার পরজীবী ঠেকাতে তা দারুণ কার্যকর হচ্ছে।  

এভাবেই তৈরি হয় আর্টেমিসিনিন, যা আজ আরও কিছু ওষুধের সঙ্গে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।  কেবল আফ্রিকাতেই এ ওষুধ প্রতি বছর অন্তত এক লাখ মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে।

১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া তু হলেন ত্রয়োদশ নারী, যিনি চিকিৎসায় অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন। তিনিই প্রথম চীনা নাগরিক, যিনি এই বিভাগে নোবেল পেলেন।

ইউইউ তু ২০০০ সাল থেকে চীনের একাডেমি অব ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের প্রধান অধ্যাপকের দায়িত্বে আছেন।

আর তার সঙ্গে এবার যে দুই বিজ্ঞানী নোবেল পাচ্ছেন, সেই উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল ও সাতোশি ওমুরা’র গবেষণার পথ ধরে এসেছে আইভারমেকটিন নামের একটি নতুন ওষুধ, যা পৃথিবীকে গোলকৃমির সংক্রমণজনিত রোগ থেকে মুক্তির আশা দিচ্ছে।

জাপানের কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক সাতোশি ওমুরা।   

মাটিতে থাকা বিভিন্ন পরজীবীর বিরুদ্ধে কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, এমন ব্যাকটেরিয়ার খোঁজে জাপানের বিভিন্ন এলাকা চষে বেরিয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞানী সাতোশি ওমুরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন, আলাদা করেছেন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া।

এভাবেই তিনি স্ট্রেপটোমাইসিস অ্যাভারমিটিলিসের সন্ধান পান, যা নতুন ওষুধ তৈরির পথ দেখিয়ে দেয়।

ওমুরা’র কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যান ক্যাম্পবেল, যিনি দেখিয়ে দেন, বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণীকে পরজীবীর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে স্ট্রেপটোমাইসিস অ্যাভারমিটিলিস দারুণ কার্যকর হতে পারে।

অ্যাভারমিটিলিস থেকে তৈরি হয় আইভারমেকটিন। মানুষের দেহে এ ওষুধ প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। সেই ওষুধই এখন বিশ্বজুড়ে লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ ও রিভার ব্লাইন্ডনেসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।    

যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিউ ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো এমিরিটাস উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল।

১৯৩০ সালে আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ক্যাম্পবেল এখন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিউ ইউনিভার্সিটিতে কাজ করছেন রিসার্চ ফেলো এমিরিটাস হিসেবে। আর বয়সে তার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ওমুরা অধ্যাপনা করছেন জাপানের কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে।    

পুরস্কার পাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওমুরা জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনকে বলেন, “এ জীবনে আমি বহু কিছু শিখেছি অণুজীব থেকে।  তাদের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে আছি। আমি এ পুরস্কার তাদের জন্যই উৎসর্গ করছি।”

নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন এই তিন বিজ্ঞানী। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

কোষীয় তথ্য পরিবহনের স্বরূপ সন্ধানে কাজের জন্য গতবছর যুক্তরাজ্যের গবেষক জন ও’কিফ এবং নরওয়ের বিজ্ঞানী দম্পতি মে-ব্রিট মোসার ও এডওয়ার্ড মোসার চিকিৎসার নোবেল পেয়েছিলেন।

মঙ্গলবার পদার্থ, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং ১২ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।