এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক খুনের ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর দায় স্বীকারের খবর আসার প্রেক্ষাপটে বার্নিকাটের এই বক্তব্য এল।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএস এর জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। বাংলাদেশে আইএস-এর মত কোনো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নেই বলেও ইতোমধ্যে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার ঢাকায় কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আইএস-এর উত্থান ঠেকাতে যা দরকার তা আমাদের আছে।”
বার্নিকাট বলেন, এমন একজন প্রধানমন্ত্রী এখন বাংলাদেশে রয়েছেন, যিনি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন।
“সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস মৌলবাদ ঠেকাতে যে সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও ঐকান্তিকতা প্রয়োজন, বহু বছরের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে আমরা তা অর্জন করেছি।”
সন্ত্রাসবাদকে একটি ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে বার্নিকাট বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এ বিষয়টি সামাল দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেন।
“আমাদের দুই দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে ইতালীয় এনজিওকর্মী চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর ৩ অক্টোবর সকালে রংপুরে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি।
দুটি ঘটনার পরই আইএস এর দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দেয় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “দুটো হামলা হয়েছে একই কায়দায়, আর এটা বাংলাদেশে স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তার কথা কিংবদন্তীতুল্য। আর তা বদলায়নি।”
এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, কোনো হুমকির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সাধারণ মানুষ, সহযোগী দেশ ও ‘নিজস্ব সূত্রের’ ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র।
“আর এ ক্ষেত্রে তাই করা হয়েছে।”
বিশ্বের কোথাও আইএস যখনই কোনো ঘটনার দায় স্বীকার করে, যুক্তরাষ্ট্র তখনই তা খতিয়ে দেখে বলে জানান এই কূটনীতিক।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দায়িত্ব নেওয়ার পর সোমবারই প্রথম এ দেশের কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের সঙ্গে বসলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে ‘অনেক কথাই’ বলতে হয়।
“কেবল দুই দেশের সম্পর্ক নয়, এ অঞ্চল নিয়েই আমাদের ‘ভিশন’ এক।”
দুই দেশের বিভিন্ন চুক্তির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ়, আমাদের আগ্রহের বিষয়গুলোও অনেক বেশি কাছাকাছি।”
স্বাস্থ্য খাত থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই- সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার এই সম্পর্ক বিদ্যমান বলে মন্তব্য করেন বার্নিকাট।
নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিষয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমাদের পরিপূর্ণ অংশীদার বলেই আমরা মনে করি।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দেওয়ার কারণ হিসেবে পুরনো কথাই বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেছেন, জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আরও কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে।