‘মুই কি আর কোনদিন হাঁটপ্যার পাবার নওম’

“মা মুই কি আর কোনদিন হাঁটপ্যার পাবার নওম। মুই কি আর স্কুলোত যাব্যার পাবার নওম। কিসোক এমপি মোর পায়োত গুলি করলো ? মুই তো কোন অন্যায় করোম নাই মা।”

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2015, 04:50 PM
Updated : 3 Oct 2015, 04:56 PM

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র সৌরভ।

গুলিবিদ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয় বছর বয়সী শাহাদাত হোসেন সৌরভ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

হাঁটতে না পারার আশঙ্কার ছেলের কান্না শুনে শিশুটির মা সেলিনা বেগম ও বাবা সাজু মিয়ার দুই চোখ গড়িয়েও পড়ছিল অশ্রু। ছেলের এমন অবস্থায় বাকরুদ্ধ তারা।

সৌরভ বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত হলেও এই শিশু স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক শুভ কুমার দাস জানান, শিশুটির দুই পায়ে তিনটি গুলি লেগেছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

“এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত হলেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে কিনা সেটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।”

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এএসএম বরকতুল্লাহ বলেন, “শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। আমিও সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।”

শুক্রবার ভোরে সুন্দরগঞ্জে উপজেলা শহরের ব্র্যাক মোড়ের গোপালচরণ এলাকায় কালাইয়ের ব্রিজের কাছে স্থানীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে নিজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শিশু সৌরভ জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীও কয়েকজন একই কথা বলেছেন।

প্রতিদিনের মত ভোরে চাচা শাজাহান আলীর ওরফে সাজা মিয়ার সঙ্গে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিল সৌরভ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত এমপি লিটন প্রায় প্রতিদিনই মাতাল অবস্থায় ভোরের দিকে বাড়ি ফেরেন। ঘটনার দিন ভোর ৬টার দিকে নিজের গাড়িতে করে সুন্দরগঞ্জ থেকে বামনডাঙ্গায় বাড়ি ফেরার পথে মাতাল অবস্থাতেই তিনি গুলি করেন।

সাংসদ লিটন এলোপাতাড়ি পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়লে দুটি গুলি সৌরভের দুই পায়ে বিদ্ধ হয় এবং বাকি তিনটি গুলি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাজুল ইসলামের পরনের লুঙ্গি ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ সৌরভের চিকিৎসার টাকা জোগাড় ও ছেলের পঙ্গুত্বের আশঙ্কায় মুষড়ে পড়েছেন এই শিশুর বাবা ফেরিওয়ালা সাজু মিয়া।

শনিবার সন্ধ্যায় সাজু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এমপি আমার ছেলেকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন কি হবে আমার ছেলের ।”

“আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সংসার চালাই। কিভাবে আমার ছেলের চিকিৎসা করাব?” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সাজু।

এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনায় বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য এমপি’র লোকজন নানাভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে।”

সৌরভের মা সেলিনা বেগম  আঞ্চলিক উচ্চারণে বলেন, “হামার ছ্যোলটার এতো অক্ত (রক্ত) পড়লো। হামি এর বিচার চাই। ভোট দিয়্যা এমপি বানাছি, হামার ছ্যোলোক গুলি করার জন্যে। এমপি হোক আর যাই হোক, হামি ছ্যোলটেক গুলি মারার বিচার চাই।”