গাইবান্ধায় শিশু গুলিবিদ্ধ, অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে নয় বছর বয়সী এক শিশু আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার ও স্থানীয়রা।

রংপুর প্রতিনিধিগাইবান্ধা ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2015, 05:50 AM
Updated : 8 Nov 2015, 11:13 AM

শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় এমপির লোকজন শিশুটিকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহত সৌরভ মিয়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণের সাজু মিয়ার ছেলে। সে গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জিন্নাত আলী।

তবে কার গুলিতে সৌরভ আহত হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, সাংসদ লিটনের গুলিতে শিশুটি আহত হয়েছে বলে তিনিও শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কয়েকবার কল করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সুন্দরগঞ্জের পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে নিজের গাড়িতে করে সুন্দরগঞ্জ থেকে বামনডাঙ্গায় বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা শহরের ব্র্যাক মোড়ের গোপালচরণ এলাকায় কালাইয়ের ব্রিজের কাছে গাড়ি থামান এমপি লিটন। সেখানে এক নারীকে তিনি গাড়ির কাছে ডাকলে ওই নারী ভয়ে দৌঁড়ে চলে যান।

পরে তিনি রাস্তায় আরেকজনকে দেখে গাড়িতে উঠতে বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তিও সরে যাওয়ায় এমপি লিটন ক্ষিপ্ত হয়ে তার দিকে গুলি ছোড়েন। এ সময় রাস্তায় থাকা সৌরভের দুই পায়ে গুলি লাগে বলে পরিবারের অভিযোগ।

সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন

সৌরভের চাচা শাজাহান আলীর ওরফে সাজা মিয়া বলেন, প্রতিদিনের মত তিনি ভোরে ভাতিজাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলেন। রাস্তায় এমপি লিটন গাড়ি থেকে ইশারায় তাকে ডাকেন। কিন্তু গাড়ির চালক ইশারায় সরে যেতে বললে সাজা মিয়া দৌঁড়ে সরে যান। এ সময় গুলি ছোড়া হলে তা সৌরভের পায়ে লাগে।

আহত অবস্থায় সৌরভকে প্রথমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ওসমান গণি জানান, সৌরভের দুই পায়ে হাঁটুর নিচে গুলি লাগায় এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় তাকে রংপুরে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

কিন্তু সকাল ৭টার দিকে রংপুর নেওয়ার পথে সৌরভকে বহনকারী গাড়ি বামনডাঙ্গা এলাকায় আটকে দেয় এমপি লিটনের লোকজন।  

সুন্দরগঞ্জের ওসি জিন্নাত আলী বলেন, এমপির লোকজন গাড়ি আটকেছে এমন খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। পরে তিনি গাড়িটি রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

সুন্দরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই মিলটন বলেন, শিশুটিকে রংপুরে নেওয়ার পথে গাড়ি আটকে দেওয়ার খবর পেয়ে তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন। তবে কীভাবে সৌরভ গুলিবিদ্ধ হল- সে বিষয়ে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শুভ কুমার দাস জানান, সৌরভের ডান পায়ে একটি ও বাঁ পায়ে দুটি গুলির ক্ষত রয়েছে।

“আমরা এক্সরে করে দেখেছি, ভেতরে গুলি নেই; বেরিয়ে গেছে। সৌরভ আশঙ্কামুক্ত,” বলেন এই চিকিৎসক।   

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৌরভ সাংবাদিকদের বলে, “আমি ব্যায়াম করবার লাগছি। এমপি লিটন.. গাড়িখান বামনডাঙ্গা থেইকে আইসছে… আসিয়ে থামাইল, থামাইয়া আবোল তাবোল কয়, কুত্তার বাচ্চা কয়, কয়া গুলি মারিল।”

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম খবর পেয়ে রংপুর মেডিকেলে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, এমপি সাহেবই গুলি করেছেন। আমরা তদন্ত করছি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে পৌর মেয়র আব্দুল্লা আল মামুনের নেতৃত্বে একদল এলাকাবাসী সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দেয়।

সৌরভের মা সেলিনা বেগম আঞ্চলিক উচ্চারণে বলেন, “সড়োকোত য্যায়া দেকি, ছ্যোলটা  হামার মাটিত পড়ি আচে। হামার ছ্যোলটার এতো অক্ত (রক্ত) পড়ল। হামি এর বিচার চাই। ভোট দিয়্যা এমপি বানাছি, হামার ছ্যোলোক গুলি করার জন্যে! এমপি হোক আর যাই হোক, হামি ছ্যোলটেক গুলি মারার বিচার চাই।”

স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমপি লিটন প্রায় প্রতিদিনই মাতাল অবস্থায় ভোরের দিকে বাড়ি ফেরেন। ওই অবস্থাতেই তিনি গোলাগুলিতে জড়িয়েছেন।

সৌরভের বাবা সাজু মিয়া জানান, ছেলে একটু সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি এ ঘটনায় মামলা করতে চান।