মৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হল সাকা-মুজাহিদকে

যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির চূড়ান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর কারাগারে পাঠানো মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2015, 05:45 PM
Updated : 2 Oct 2015, 06:35 AM

তাদের দুজনের আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর বুধবারই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর লাল সালুতে মুড়িয়ে তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যায়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রয়েছেন গাজীপুরে কাশিমপুর কারাগারে।

লাল সালুতে মোড়ানো সাবেক দুই মন্ত্রীর মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে বিকালে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন সড়কে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারী।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল আপিল বিভাগের রায় পাওয়ার পর ডেথ ওয়ারেন্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ট্রাইব্যুনালের আদেশে আমরা তা করেছি।

“ডেথ ওয়ারেন্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে; তিনিই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।”

পরোয়ানা পাওয়ার পর কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর কবির ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দুটি মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছি। একটি পরোয়ানা মুজাহিদকে পড়ে শোনানো হয়েছে। অন্য পরোয়ানা কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের সুরক্ষিত ওই কারাগারে পরোয়ানা পৌঁছায় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা।

তিনি বলেন,“পরোয়ানা তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে। পড়ে শোনাতে আধা ঘণ্টা সময় লেগেছে।”

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী

৬৬ বছর বয়সী সালাউদ্দিন কাদের ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। মানবতাবিরোধী চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলার আসামি ৬৭ বছর বয়সী মুজাহিদ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে।

ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানার অনুলিপি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও। এর মধ্য দিয়ে শুরু হল দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।

মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে। আসামিপক্ষের রায়ের কপি পাওয়া অথবা আসামিকে রায় শোনানোর মধ্যে যেটি আগে হবে,তখন থেকেই শুরু হবে এই দিন গণনা।

নিয়ম অনুযায়ী,মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে। তবে রিভিউ আবেদন হলে তার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের ইস্যু করা কপি পেয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান এই দুই যুদ্ধাপরাধীর আপিল মামলায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।

রিভিউ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “দুজনের মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের ইস্যু কপি পেয়েছি। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হবে বলে লিখিতভাবে অবহিত করে রাষ্ট্রপক্ষকে (চিফ প্রসিকিউটর) নোটিস পাঠানো হয়েছে।”

দুই আসামির পক্ষ থেকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হলে আবেদন দুটির মীমাংসা হলে সে অনুযায়ী সরকার পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ইতোমধ্যে বলেছেন, “আইন অনুযায়ী যেভাবে অগ্রসর হওয়ার কথা, আমরা সেভাবেই অগ্রসর হব। ”

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ।

এর আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সময় দুই যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের কেউ সেই আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।  

আলী আহসান মুজাহিদ

যুদ্ধাপরাধের দায়ে এর আগে কয়েকটি সাজা কার্যকর হলেও এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে যাচ্ছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেওয়ার উষ্মা এসেছে আদালতের কাছ থেকেও।

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের সামরিক শাসক এরশাদ আমলে মন্ত্রী ছিলেন। বিএনপি আমলে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক এই সংসদ সদস্য।

একাত্তরে আল বদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদ কখনও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে না পারলেও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার জোট সরকারে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তার আগে ১৭ জুলাই মুজাহিদের প্রাণদণ্ডের রায় এসেছিল।

আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ গত ১৬ জুন মুজাহিদের আপিলের রায় ঘোষণা করে।

একই বেঞ্চ মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায় ঘোষণা করে গত ২৯ জুলাই।

দুই রায়েই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার দণ্ড বহাল থাকে। বিচারকদের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা বুধবার মুজাহিদের ১৯১ এবং সালাউদ্দিন কাদেরের ২১৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।