একীভূত হতে বিটিআরসিতে চিঠি রবি-এয়ারটেলের

ব্যবসা একীভূত করার অনুমতি চেয়ে বিটিআরসিতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2015, 06:44 PM
Updated : 19 Dec 2021, 09:51 AM

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে জমা পড়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, একীভূত হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে মালয়েশিয়া ভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ ও এনটিটি ডকোমার কাছে; বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে ভারতি এয়ারটেলের কাছে।

রবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সুপুন বীরাসিংহে এবং এয়ারটেল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিডি শর্মার স্বাক্ষর চিঠিতে রয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

গত ৯ সেপ্টম্বর ব্যবসা এক করার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশের এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেল।

বিটিআরসিতে জমা দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ব্যবসা একীভূত হওয়ার পর এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তিন বছর পর ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।

দুই অপারেটর একীভূত হওয়ার পর যৌথ গ্রাহকদের কোন ধরনের অসুবিধা হবে না জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, একীভূত হওয়ার পর ব্যবসায় লাভবান ও সেবা আরও উন্নত হবে।

বাংলাদেশে মোট ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের মধ্যে ২ কোটি ৭৯ লাখ রবির, ৯০ লাখ এয়ারটেলের। এ হিসেবে মোট গ্রাহকের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এই দুটি কোম্পানির।

রবি'র কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচনা শুরু পর এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।”

তবে এয়ারটেলের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শমিত মাহবুব শাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠানো হলেও বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, তার কাছে কোনো চিঠি যায়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমার হাতে এসে পৌছায়নি। তবে এ উদ্যেগকে স্বাগত জানাই। এতে বাজারে ভাল একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে মনে করি।”

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি দুই অপারেটর যৌথভাবে এ চিঠি জমা দিয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি কমিশন সভায় এ চিঠি নিয়ে আলাচনা করার কথা রয়েছে।

রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল। তারা ওয়ারিদের ব্যবসা বাংলাদেশে কিনে নিয়েছিল।

এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

২০১৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূলধনী ব্যয়ে ৭১০ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রবির মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

দেশজুড়ে ৮ হাজার ১১৯টি সাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে রবি, যার মধ্যে ৩.৫জি সাইটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫০টির বেশি।

এশিয়াতে আজিয়াটা গ্রুপ এবং এর সহযোগী ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ২৬ কোটির বেশি। ২০১৪ সালে গ্রুপটির আয় ছিল ১৮.৭ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতি এয়ারটেলের বিনিয়োগ শুরু ২০১০ সালে। তখন ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল তারা। তিন বছর পর ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতি এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতি এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড।

বর্তমানে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার দিকে থেকে এয়ারটেল বাংলাদেশে চতুর্থ।

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন, যার গ্রাহক সংখ্যা গত জুলাই শেষে ছিল ৫ কেটি ৩৯ লাখ। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮৭ লাখ।