মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে চেজারে তাভেল্লা নামে ওই ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন চেজারে তাভেল্লা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই এলাকায় অন্যান্য দিন রাস্তার পাশের বাতিগুলো জ্বলতে দেখলেও ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর থেকে বাতিগুলো নেভানো ছিল।
ঘটনাস্থল গুলশান-২ এর ৮৩ নম্বর রোডের মুখে সোমবার সোয়া ৬টার দিকে একটি সাইকেল মেরামতের কাজ করছিলেন গুলশানের রিকশা মেকানিক মো.জয়নাল।
দীর্ঘ চার দশক ধরে গুলশান এলাকায় সাইকেল মেরামতের কাজ করে আসছেন এই মেকানিক।
জয়নাল জানান, বিদেশি ওই নাগরিককে হত্যার পর খুনিদের বন্দুক হাতে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে তিনি দেখেছেন।
“তিনটা থেকে চারটা গুলির আওয়াজ শোনার পরই দেখি হেংলা পাতলা দুইটা পোলা একটা মটরসাইকেলে উঠল। মাঝখানের পোলাডার হাতে একটা পিস্তল ছিল। ওগো জন্য রাস্তার কিছু দূরে একটা মোটরসাইকেলে মাঝবয়সী এক লোক অপেক্ষা করছিল।”
অন্যান্য দিনের মতো রাস্তায় বাতি না থাকায় অন্ধকারে ওই যুবকদের চেহারা দেখতে পারেননি বলেও জানান জয়নাল।
“ওদের এই এলাকায় আগে কখনো দেখি নাই। ওদের দুইজন কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পড়া ছিল, আর মোটরসাইলে থাকা লোকটা একটা ডোরাকাটা গেঞ্জি পরছিল। ওদের মুখে কোন কাপড় বাঁধা ছিল না। দেখে বোঝার উপায় নাই ওরা খুন করতে পারে।”
মোটরসাইকেলে দুই জন ওঠার পরই তারা মূল সড়ক দিয়ে গাড়ি না নিয়ে গুলশান-২ এর ৮৩ নম্বর সড়কের ভেতর দিয়েই মূহূর্তে পালিয়ে যায় বলেও খুনিদের শেষ বারের মত দেখার বর্ণনা দেন তিনি।
বললেন, ভয়ে ওই সময় কোন চিৎকার করতে পারেননি।
আর অন্ধকার ওই সড়কে নিজের কাঠের পিড়িতে বসে ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক সিতারা বেগম।
“সোমবার সন্ধ্যার পরই গুলির শব্দ পাইলে দেখি কালো গেঞ্জি পড়ে দুইটা পোলা একটা মোটরসাইকেলে উঠছে। রাস্তার বাতিগুলা বন্ধ থাকায় ওদের চেহারা স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছিল না।”
হত্যার ঘটনাটি যে পূর্ব পরিকল্পিত ছিল তা উঠে এসেছে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সার্জেন্ট মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের ভাষ্যে।
ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সার্ভিসেসের এরিয়া ইন্সপেক্টর মোশারফ জানালেন, ওই বিদেশিকে গুলি করার আগে দুই ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করছিলেন।
তিনি বলেন, “দুই ব্যক্তিকে ওই বিদেশি নাগরিকের পেছনে যেতে দেখেছি। সম্ভবত তারা তাকে অনুসরণ করছিল; আর ৮৩ নম্বর রোডে নির্মাণাধীন জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ভবনের সামনে মটরসাইকেলসহ দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। তবে সড়কবাতি নেভানো থাকায় তাদের চিনতে পারিনি।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোশাররফ বলেন, টিশার্ট ও থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরা ওই বিদেশি নাগরিক ৯০ নম্বর সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন।
“কিছুদূর এগোনোর পর পেছনে থাকা ওই দুই ব্যক্তির কেউ একজন গুলি ছোড়ে। পরপর তিনটি গুলির শব্দ আমি শুনেছি। ছুটে গিয়ে দেখি বিদেশি লোকটা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে, তার সারা শরীর রক্তে ভিজে গেছে।”
পরে তাৎক্ষণিকভাবে চেজারে তেভাল্লাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে নিজেই সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করে দিয়েছিলেন বলেও জানালেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
সিজারকে যেখানে গুলি করা হয়েছে ওই রাস্তার পাশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ভবনের দেয়াল এবং কাছেই পাকিস্তান দূতাবাস।
কেউ কেউ ঘটনাটিকে ‘ছিনতাই’ বলে দাবি করলেও মোশাররফের ধারণা পরিকল্পনা করেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
“সম্ভবত পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। কারণ ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকলে তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র তারা নিয়ে যেত, তবে এমনটি ঘটেনি। মোবাইলসহ সব কিছুই সেখানে পড়ে ছিল।”
ঘটনাস্থল দেখতে এসে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহফুজুর রহমানও জানান, ওই বিদেশির কোন ব্যাগ বা মোবাইল ফোন খোয়া যায়নি।
বিদেশিকে হত্যার এই ঘটনার সঙ্গে ছিনতাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদও।