২০১২ সালের আগের সিমে যাবে এসএমএস

মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা ২০১২ সালের আগে সিম নিবন্ধন করেছেন, এসএমএস পাঠিয়ে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাইবে অপারেটরগুলো।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2015, 12:57 PM
Updated : 22 Sept 2015, 05:14 PM

এই এসএমএসে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, নাম এবং জন্মতারিখ জানতে চাওয়া হবে। গ্রাহক সেই তথ্য মোবাইল অপারেটরদের দিলে তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।

২০১২ সালের আগে নিবন্ধিত অধিকাংশ সিমের সঠিক তথ্য অপারেটরদের হাতে না থাকায় এই ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন।  

মঙ্গলবার মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহী, ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, এনটিএমসি ও বিটিআরসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

প্রায় আড়াই ঘণ্টার এ বৈঠকের আগে ও পরে দুই দফা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারানা হালিম্

বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে অপারেটররা গ্রাহকদের একটি কোড দেবে। সেই কোডে গ্রাহক তার নিবন্ধনের তথ্য জানতে চাইতে পারবেন।

“অপারেটররা যদি না দিতে পারে তাহলে সেই কোডে গ্রাহকরা তাদের এনআইডি নম্বর ও নাম দিয়ে এসএমএস করে নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন এবং তার এনআইডিতে কতটি সিম নিবন্ধন রয়েছে তাও জানতে পারবেন।”

তারানা জানান, আগামী এক নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাহকরা কাস্টমার কেয়ার থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

গ্রাহকরা নিজের ইচ্ছায় এ কাজ করবে বলেও প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

“আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হলে সঠিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হবে। এক্ষেত্রে যাদের সঠিকভাবে নিবন্ধন করা নেই বা এক এনআইডিতে একাধিক সিম রয়েছে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।” 

এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালানো হবে বলেও জানান তিনি।

ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন না করে সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বৈঠকে বসার আগে তারানা হালিম বলেন, “গতকাল পর্যন্ত অপারেটররা গ্রাহকদের যে তথ্য দিয়েছে তা খুবই অপর্যাপ্ত। সব অপারেটর মিলিয়ে প্রায় ১৩ কোটি সিম আছে। এর মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ সিমের তথ্য মিলেছে।”

এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি গ্রাহকের নিবন্ধন যাচাই করে দেখা গেছে, এর মধ্যে সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি সিম।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ভুয়া এনআইডি দিয়ে সিম তোলা এবং এক এনআইডি দেখিয়ে বহু সিম কেনার বেশ কিছু ঘটনা নিবন্ধন যাচাইয়ে ধরা পড়েছে।

একটি ‘ভুয়া’ জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম তোলা হয়েছে। আরও তিনটি এনআইডি পাওয়া গেছে, যেগুলোর বিপরীতে ১১ হাজার ৮৬৬টি, ১১ হাজার ৩২৮টি ও ৬ হাজার ১৭৯টি সিমের নিবন্ধন হয়েছে।

একটি এনআইডির বিপরীতে কয়টি সিম গ্রাহক ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ আসছে কিনা জানতে চাইলে বৈঠকের পর তারানা হালিম বলেন, “এটি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া কঠিন। গ্রাহকদের চাহিদার বিষয়ে জেনে পরবর্তীতে এ বিষয়ে ভাবা হবে। তবে এক এনআইডির বিপরীতে অস্বাভাবিক সিম- যেমন চার হাজার বা এক হাজার থাকতে পারে না।”

বাজারে আগে থেকে চালু হওয়া সিম পাওয়া গেলে নিয়ম অনুযায়ী অপারেটরদের জরিমানা করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে শেষ করার ইচ্ছার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন তারানা হালিম।

তবে মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আমি গ্রাহকদের শেষ পর্যন্ত সময় দিতে চাই। অবৈধ বা অনিবন্ধিত সিম বন্ধের কোনো সময়সীমা জানাচ্ছি না, তবে এ প্রক্রিয়া শেষে অবশ্যই এ ধরনের সিম বন্ধ হয়ে যাবে এবং বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অনিবন্ধিত সিমের জন্য দায়ী কে- তা না খুঁজে এই কাজটা শেষ করতে চাইছি।”

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।