সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার চায় ইরান

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পরাশক্তিদের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের যেসব সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার চায় ইরান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2015, 02:31 PM
Updated : 16 Sept 2015, 03:39 PM

একদিনের সফর শেষে বুধবার ঢাকায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেছেন, “ইরানের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইসলামী দেশ।”

জুলাইয়ে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি কার্যকর হলে তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ ইরানের উপর থেকে প্রায় এক দশকের অবরোধ উঠবে।

জারিফ বলেন, চুক্তিতে কী হয়েছে তা বাংলাদেশকে অবহিত করা প্রয়োজন মনে করায় চুক্তি সম্পাদনের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি এখানে এসেছেন।

“কারণ আমাদের অধিকার ফিরে পেতে যে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাতে তারা (বাংলাদেশ) আমাদের সমর্থন করেছে। তাই আমি বন্ধুভাবাপন্ন বাংলাদেশের জনগণ এবং বন্ধুভাবাপন্ন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম।

“এই অর্জনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের লাভের জন্য কীভাবে কাজ করা যায় সেসব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাই।”

জাভাদ জারিফ মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা আসার পর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে।

এসব বৈঠকে ইরান-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং সম্পর্ক জোরদারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধিতে তার আগ্রহের কথা তুলে ধরেছেন বলে জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

“বিদ্যুৎ, বস্ত্র, প্রক্রিয়াজাতকরণ, শিল্প, বিজ্ঞানসহ যে সব ক্ষেত্রে ইরান ও বাংলাদেশ যে যেভাবে সহযোগিতা করতে পারে সেসব ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। উভয় দেশের জনগণের সুবিধায় আমরা সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বের করতে পারি।”

নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ ও জার্মানি- এই ছয়জাতির সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি হ্রাসের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চুক্তিতে পৌঁছানোর পর গত অগাস্টে ভারত ও পাকিস্তান সফর করেন জাভাদ জারিফ।

এই অঞ্চলে দ্বিতীয় দফা সফরে বেইজিং থেকে ঢাকা এলেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরমাণু চুক্তি করার জন্য ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ সাঈদ আলী হোসেইনি-খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ইরানি জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

চুক্তির বাস্তবায়ন ‘এই অঞ্চল ও এর বাইরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনকল্যাণে’ ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

এতে ইরানের অর্থনীতিতে ‘নতুন গতি’ আসবে এবং তা বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নে ইরানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন জারিফ।

এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ অভিহিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ চুক্তি আবারও ‘বিরোধ নিরসনে আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার’ গুরুত্ব প্রমাণ করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জারিফ বলেন, পরিকল্পনা মতো সব এগোলে নভেম্বরের শেষ নাগাদ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ও ইরানের ঐতিহাসিক যোগসূত্র বিশেষত ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুই দেশের দীর্ঘকালের সম্পর্কের উপর আলোকপাত করে তা আরও এগিয়ে নেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।

বেসরকারি খাতে সহযোগিতার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জারিফ বলেন, ইরানে পরবর্তী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।

ওই বৈঠক চলাকালে বেসরকারি খাতের জন্যও আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার শিগগিরই বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রীকে তাদের দেশে স্বাগত জানাবেন।

“ইরান কীভাবে বাংলাদেশকে জ্বালানি দিতে পারে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর জন্য জ্বালানির ক্ষেত্রে ইরান খুব আস্থা করার মতো উৎস।”

জ্বালানি বিষয়ে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে বর্তমানে তারা পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান জারিফ।

জ্বালানি খাতে বৃহত্তর সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশও অংশীদার হতে পারে-এ ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “অন্যান্য সম্ভাবনা নিয়েও কাজ করা যেতে পারে।” 

উগ্রপন্থা ও সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ও ইরান একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অবশ্য তিনি বলেন, “ইসলাম ও উগ্রপন্থার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই এবং পরমাণু চুক্তি দেখিয়ে দিয়েছে যে, কোনো সমস্যার ক্ষেত্রেই সামরিকভাবে সমাধান আসে না। সবকিছু রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।”

ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের উপর সৌদি আরবের বিমান হামলার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু বন্ধু এখনও কল্পনার জগতে আছে যে, তেলের টাকায় কেনা কিছু হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে দমন করে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন তারা।

“ইয়েমেনের সমস্যা ইয়েমেনিরা নিজেরা সমাধান করবে এবং সিরিয়ানদের তাদের সমস্যা সমাধান করতে দিতে হবে।”