শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে কয়েকটি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আলটিমেটলি তাদের (শিক্ষার্থীদের) ওপর…। এ বছর তারা (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) কিছু চার্জ করছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যখন ফিস নির্ধারণ করবে, এটা একটা হিসাব তারা নেবে।”
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘শান্ত করতে’ আগের দিন যে ব্যাখ্যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দিয়েছে, অর্থমন্ত্রীর ভাষায় তা ছিল একটি ‘কমপ্রোমাইজ’।
বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার দিনভর রাজপথে বিক্ষোভ করলে যানজটে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানী।
ওই প্রেক্ষাপটে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এনবিআরের একটি ‘ব্যাখ্যা’ দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়, ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, শিক্ষার্থীদের নয়।
‘বিদ্যমান টিউশন ফি’র মধ্যে ভ্যাট ‘অন্তর্ভুক্ত থাকায়’ টিউশন ফি বাড়ার কোনো ‘সুযোগ নেই’ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
পরে অর্থমন্ত্রী মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও একই বক্তব্য আসে, যদিও ভ্যাটের মৌলিক ধারণার সঙ্গে সরকারের ব্যাখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ কি না- সে প্রশ্ন তোলেন কর বিষয়ে অভিজ্ঞরা।
তারা বলেন, যিনি সেবা নেন, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট তাকেই দিতে হয়। কিন্তু এনবিআর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে ততে ভ্যাট দিতে হবে সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে।
এনবিআরের একজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু বিষয়টি নিয়ে একটি জটিলতা হয়েছে, সেহেতু একটু কুল ডাউন করার জন্য এনবিআর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে আমার মনে হয়।”
শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার ভ্যাটের আওতায় আসতে পারে কি না- সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সরকারের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন জানিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে শনি থেকে সোমবার ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী বলেন, ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেবে বলা হলেও ভবিষ্যতে বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও টিউশন ফির টাকা বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেই ওই ভ্যাট আদায় করবে।
এরপর বিকেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয় মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে।
সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
শেষ পর্যন্ত ভ্যাটের টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে তিনি বলেন, “আমি যেটা মনে করি, এবার তো কেউ… নো বডি ইজ গোয়িং টু চার্জ এনিথিং ফর দিস। তারা অলরেডি কালেক্ট করেছে, সেখান থেকে দেবে। ইন দি কামিং ইয়ারস, ওয়েল, ইট মে বি… দে উইল প্রোবাবলি পুট ইট ইন দেয়ার ক্যালকুলেশন অ্যন্ড ফিক্স দি ফিস, দ্যাটস অল।”
এক সাংবাদিক এ সময় বলেন, ওই কর ভ্যাট হয়ে থাকলে তা শিক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা। কিন্তু সরকার বলছে, ওই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হবে, যা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
এর উত্তরে মুহিত বলেন, “এটা একটা কমপ্রোমাইজ করা হয়েছে। ছেলেপেলেদের আপত্তির জন্য দিস হ্যাভ বিন এ কমপ্রোমাইজ, হুইচ হ্যাভ বিন স্ট্রাক বিটুইন দ্য ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ অ্যান্ড দি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস।”