মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ!

আঠার বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাগুরার একটি বিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির নোটিস পাঠানো জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2015, 05:50 AM
Updated : 5 Sept 2015, 05:58 AM

সদর উপজেলার আলোকদিয়া পুখরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে আব্দুর রউফ বিশ্বাস নামে স্কুলটির এক এমএলএসএসকে নোটিস পাঠিয়েছে।

কিন্তু ফরিদপুরের গয়েশপুর গ্রামের তালেব বিশ্বাসের ছেলে রউফ ১৯৯৭ সালে মারা গেছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

তাহলে সাম্প্রতিক এই ঘটনায় রউফের নামে নোটিস কেন?

উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রউফ মারা গেলেও তার নাম নিয়ে বিদ্যালয়টিতে চাকরি করে যাচ্ছেন পুখুরিয়া গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে আকবর হোসেন। আর অভিযোগটি আসলে তারই বিরুদ্ধে।

কিন্তু বিদ্যালয়ের কাগজপত্রে আকবর নামে কেউ না থাকায় নোটিসটি গেছে রউফের নামেই।

রউফ-আকবরের এই বিভ্রান্তিতে ওই বিদ্যালয়টিতে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টিও প্রকাশ্য হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শামসুর রহমান মোল্যা ও ক্রীড়া শিক্ষক মো. মুজাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর বিশ্বাস দায়িত্ব পালনের সময় ১৯৭৪ সালের ১ মে তার ছোট ভাই রউফ বিশ্বাসকে এমএলএসএস পদে চাকরি দিয়েছিলেন।

কিন্তু রউফ কখনও বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি; যদিও তার নামে বেতন-ভাতা ঠিকই তোলা হত।

গফুর চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮২ সালে মারা যাওয়ার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন গোলজার হোসেন। রউফ তখনও এই বিদ্যালয়ে আসতেন না। কিন্তু বেতন-ভাতা ঠিকই তোলা হত।

নজরুল ইসলাম নামে এক গ্রামবাসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৯৯৭ সালে রউফ মারা গেলে তার পদটি শূন্য ঘোষণা না করে আকবরকে ডেকে পিয়ন হিসেবে তার ‘প্রক্সি’ দিতে বলা হয়। সেই থেকে রউফ সেজে আকবরই চাকরি করে আসছেন।

এর পেছনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে বলে তার অভিযোগ।

এ বিষয়ে আকবরের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে যোগাযোগ করলে তিনি তার নাম ‘রউফ’ বলেই দাবি করেন।

তবে গ্রামবাসীর বক্তব্য সমর্থন করে আবুল হোসেন নামে রউফের এক স্বজন বলেন, চার চাচাই ওই চাকরিতে ছিলেন এবং ১৮ বছর আগে তিনি মারা যান।

“অথচ স্কুল কমিটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেছে, এটা খুবই অসম্মানজনক।”

এসব বিষয়ে আকবরের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভাই আমি অশিক্ষিত মানুষ, কিছু জানি না। গোলজার স্যার আমাকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। তাই করছি। মাস গেলে বেতন দেয়। এতেই আমি খুশি।”

সাবেক প্রধান শিক্ষক গোলজার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সময়ে ওই পদে রউফ বা আকবর কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমন দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক অসিত শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মেয়েটির বাবার মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয়েছে পিয়নকে।”

তাকে কেউ কেউ আকবর নামে ডাকলে প্রকৃত নাম আব্দুর রউফ বিশ্বাস বলেই জানেন বলে দাবি করেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক বলেন, “এখানে মৃত কোনো ব্যক্তির হয়ে আরেকজন চাকরি করছে কি না, তা তো জানা নেই।”

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু সাইদ সানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মৃত ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে অন্য কারো চাকরি করার খবরটি তারও জানা নেই। এখন শোনার পর প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”