গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাল্টিপারপাসের বিরুদ্ধে 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একটি সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকের অন্তত দেড়শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2015, 03:27 PM
Updated : 4 Sept 2015, 03:27 PM

‘আল-ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহেদ কামাল সুজন এখন পলাতক বলে দাবি গ্রাহকদের।

গ্রাহকরা তাদের অভিযোগ তালিকা আকারে জেলা সমবায় অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জমা দিয়েছেন।

এসব অভিযোগের তদন্ত করছে সমবায় অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

গ্রাহকরা জানান, আল-ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেড ২০১০ সালে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন পেলেও ২০০৬ সাল থেকেই তাদের কার্যক্রম চলছে।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহেদ কামাল সুজন সাধারণ মানুষকে লোভনীয় লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদের কাছ থেকে অন্তত দেড়শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রথমদিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকদেরকে লভ্যাংশ দেওয়া হলেও গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেলে লভ্যাংশ প্রদানে টালবাহানা শুরু হয়।

 বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের বড় অংকের আমানত জমাদানকারী গ্রাহকের সংখ্যা ১৯১৭। এছাড়া মাসিক আমানতীর সংখ্যা আরও প্রায় এক হাজার।

এছাড়া ঋণ দেওয়া এবং সুদ আদায়েও প্রতিষ্ঠানটি সমবায়ের আইনকানুন মানছে না বলে রয়েছে অভিযোগ।

সরেজমিনে আল-ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস লিমিটেড কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, টাকার জন্য আর্তনাদ করছেন উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের মায়াধনী নামের এক গ্রাহক।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরিবারে উপার্জনক্ষম তেমন কেউ না থাকায় তালাকপ্রাপ্তা মেয়ের কাবিনের ও এক প্রতিবেশীর টাকা মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকা এ প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখেন।

“প্রথমদিকে নিয়মিত লভ্যাংশ দিলেও গত এক বছর কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না।”

এখন লভ্যাংশ তো দূরের কথা আমানতের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য দফায় দফায় প্রতিষ্ঠানে এসেও চেয়ারম্যান শাহেদ কামাল সুজনের দেখা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।”

এছাড়া সেখানে গেলে কিছু যুবক তাকে হুমকিধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মায়াধনী।

শুধু মায়াধনী নয়, কথা হয় হোসনে আরা বেগম, পরিমল চন্দ্র দাস, দেলোয়ার হোসেন, নূর নবীসহ অনেক গ্রাহকের সঙ্গে।

তারা জানান, এ প্রতিষ্ঠানে সাত হাজার থেকে শুরু করে এক-দেড় কোটি টাকাও আমানত রেখেছেন কোনো কোনো গ্রাহক। বর্তমানে তারা নিজেদের আমানতের টাকা পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন।

গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া আমানতের টাকা দিয়ে মূল প্রতিষ্ঠান মাল্টিপারপাস ছাড়াও অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০টিরও বেশি, যা আল-ইত্তেহাদ গ্রুপ হিসেবে চলছে বলে জানান তারা।

তারা বলেন, এসব অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির শো রুম, হাসপাতাল, কিন্ডারগার্টেন, ছাপাখানা, রিয়েল এস্টেট, জুয়েলারির দোকান ও পরিবহন ব্যবসা।

এসব প্রতিষ্ঠানের একক মালিকানা শাহেদ কামাল সুজনের বলেও জানান তারা।

গ্রাহকদের অভিযোগে কতজন গ্রাহক থেকে কত টাকা করে নেওয়া হয়েছে তার তালিকা এবং সুজনের নামে কী কী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ও তার আর্থিক মূল্য কত টাকা হবে তাও উল্লেখ আছে।

এ ব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা দুলাল মিয়া বলেন, সমবায় অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আর্থিক লেনদেন বা ব্যাংকিং কার্যক্রম করার বৈধতা নেই।

আল-ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন ও গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসার পরই দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

কোম্পানীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল আলম জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও পরে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে গ্রাহকরা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন। একইসঙ্গে শাহেদ কামাল সুজনের পক্ষে কথা বলেন তার প্রতিনিধি একরাম।

আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।   

ইউএনও আরও জানান, এ বিষয়ে গত ২৫ অগাস্ট উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাজিদুর রহমান সাজেদ।

এ কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং শাহেদ কামাল সুজনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বেশ কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল-ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেডের কার্যালয়ে গেলে শাহেদ কামাল সুজনকে পাওয়া যায়নি।

মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইন বহির্ভূতভাবে আমানত গ্রহণ, অঙ্গপ্রতিষ্ঠাগুলোর স্বত্ব মূল প্রতিষ্ঠান মাল্টিপারপাসের নামে না করাসহ কিছু অভিযোগ স্বীকার করলেও আত্মগোপন বা টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেননি।