সিলেটে জাগরণকর্মীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গণজাগরণকর্মী শাহরিয়ার মজুমদারের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2015, 03:15 PM
Updated : 4 Sept 2015, 06:01 PM

মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে একে আত্মহত্যার ঘটনা বললেও তা মানতে নারাজ শাহরিয়ারের বন্ধু-স্বজনরা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুরহস্য বের করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর আখালিয়ার সুরমা আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৫৪ নম্বর ভবনের চার তলায় মেসে নিজের কক্ষ থেকে শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধার করা হয়।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ছেলে শাহরিয়ার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যার শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শাহরিয়ার যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন। ব্লগার ও বিজ্ঞানলেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পর সিলেটে প্রতিবাদ মিছিলেও অংশ নেন তিনি।

ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি

শাহরিয়ারের ফেইসবুক প্রচ্ছদ

ওই মিছিলে অংশ নেওয়ার পর থেকেই শাহরিয়ার নানা ধরনের হুমকি পাচ্ছিলেন বলে তার কয়েকজন বন্ধু জানিয়েছেন। কাফনের কাপড় ও চিরকুট পাঠিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তারা।

শাহরিয়ারের বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রফ্রন্টের নেতা সুদীপ্ত দাশ বলেন, ভিসিবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে বুধবারও ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কর্মসূচি আয়োজন করেন শাহরিয়ার।

“সেদিনও তাকে বেশ হাসিখুশি দেখা গেছে। শাহরিয়ার কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। এই মৃত্যু রহস্যজনক।”

বৃহস্পতিবার রাতে শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধারের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম সুমন ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই অনেক রাজাকারপ্রেমী জঙ্গির চক্ষুশূল শাহরিয়ার।তখন থেকে সে বিভিন্ন সময়ে কিছু মৃত্যু পরোয়ানার মতো চিঠি এবং অন্যান্য হুমকি পেয়েছে।”

শাহরিয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমি ওর সেফটি নিয়ে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম-বলতাম একা চলাফেরা না করতে।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে শাহরিয়ার। (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

শাহরিয়ারের সঙ্গে ওই বাসায় যারা থাকতেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা যখন বাইরে বেরোন তখন শাহরিয়ার একা বাসায় ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেসে ফিরে অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় পুলিশকে খবর দেন তারা। পুলিশ এসে রাত ৯টার দিকে দরজা ভেঙে শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধার করে। ঘরে জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেল্ট দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

তার মৃত্যু নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্লাহ বলেছেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শাহরিয়ার আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

শুক্রবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহরিয়ারের ময়নাতদন্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা রহমতউল্লাহ বলেন, “অনেক সময় বসা অবস্থায়ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। একে পার্শিয়াল হ্যাঙ্গিং বলে।”

শাহরিয়ারের লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক  আমিনুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ইয়াসমিন হকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু ও শাহরিয়ারের বন্ধু-সহপাঠীরা।

সিলেট গণজাগরণ মঞ্চও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।