তাজরীন মালিকসহ ১৩ আসামির বিচার শুরু

তিন বছর আগে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসের শতাধিক শ্রমিককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ ১৩ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2015, 06:58 AM
Updated : 3 Sept 2015, 12:17 PM

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এম কুদ্দুস জামান বৃহস্পতিবার এ মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর জন্য ১ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন।

অপরাধজনক প্রাণনাশের অভিযোগে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই ১৩ আসামির বিচার হবে।

দোষী সাব্যস্ত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন এ আদালতের পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তুবা গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ১০৪ শ্রমিক।

আগুন লাগার পর শ্রমিকদের বের হতে না দিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে।  এরপর তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের কয়েক মাসের মধ্যে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করে।

মামলা হওয়ার ১৩ মাস পর ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সিআইডির পরিদর্শক এ কে এম মহসীন উজ জামান খান।

অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়।

বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের সময় দেলোয়ার ও মাহমুদাসহ জামিনে থাকা সাত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

পলাতক পাঁচজনের মধ্যে তাজরীনের প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ এদিন আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

এই আটজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।

তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, ফাইল ছবি

অব্যাহতির আবেদনে দেলোয়ার ও মাহমুদা আক্তারের আইনজীবী টি এম আকবর বলেন, “তাজরীন ফ্যাশনস এর ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই গার্মেন্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আগুনের সূত্রপাত আমার মক্কেলদের হাত দিয়ে নয়, তারা নিজেদের সম্পত্তিতে আগুন দেননি। ১৩৭ জন সাক্ষীর কেউ ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে তাদের নাম বলেননি।”

বিচারক এ সময় আইনজীবীকে বলেন, “আপনাদের তো অবহেলা রয়েছে।”

জবাবে আকবর বলেন, “আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। ঘটনার পর একটি গেট খোলা রাখা হয়েছিল। দায়দায়িত্ব ছিল কর্মরত সংশ্লষ্ট ব্যক্তিদের।”

এ সময় বিচারক বলেন, “এটি বিচারের বিষয়ে। সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হোক। আপনাদের যদি নির্দোষ থাকার গ্রাউন্ড থাকে তাহলে খালাস পেয়ে যাবেন।”

এ সময় এই আইনজীবী বলেন, “তাজরীন ফ্যাশনস একটি ফ্যামিলি কোম্পানি, আমরা মূল মালিক নই।”

আকবরের সহযোগী আইনজীবী এ টি এম গোলাম গাউস এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বিষয়ক কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেন।”

পরে রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী বলেন, “এ ঘটনায় ১১১ জন মারা গেছেন। একটি গেইট খোলা রেখে সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল, বাধ্য করা হয়েছিল একটি গেইট দিয়ে বের হতে। এটা ছিল একটি হত্যাকাণ্ড।”

দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

আসামিদের মধ্যে দেলোয়ার, মাহমুদা ও মোর্শেদ ছাড়াও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল-আমিন, ইনচার্জ আনিসুর রহমান, স্টোর ইনচার্জ আল-আমিন জামিনে রয়েছেন।

আর কারখানা ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল ও লোডার শামীম মিয়া পলাতক।