জট-জলের আরও একদিন

সকাল থেকে টানা বৃষ্টি আর সড়কে জমে থাকা পানিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 01:57 PM
Updated : 2 Sept 2015, 01:57 PM

রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, শান্তিনগর এলাকার পাশাপাশি বেশিরভাগ এলাকায় একই দৃশ্য দেখা গেছে। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল খানিকটা কম।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে; গতকাল তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার।  

প্রবল বৃষ্টিতে হাঁটুপানি ভেঙে যাতায়াত করতে দেখা গেছে ধানমণ্ডি, মিরপুর রোড, মানিক মিয়া এভিনিউ, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায়। মূল সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতেও ছিল জলাবদ্ধতা।

ধানমণ্ডি শংকর এলাকার বাসিন্দা হাফিজ আল আসাদ নিজের বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসা থেকে বের হয়েই হাটু পানি ভাঙতে হয়েছে। জুতো, প্যান্ট ভিজে একাকার, এ অবস্থাতেই অফিসে যেতে হবে।”

কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেইট যাওয়ার রাস্তায় এক পাশে পানি জমে সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় যানবাহনের গতি ছিল কম; ফলে সৃষ্টি হয় যানজট।

মিরপুর রোড ও মানিকমিয়ার এভিনিউয়ে যানজটের কারণে পায়ে হেঁটে রওনা হতে দেখা যায় অনেককে। যানজটের কারণে লেন মেনে না চলায় উল্টো পথে আসা গাড়ি সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকেও।

মো. আকতারুজ্জামান নামে এক পথচারী বলেন, “গতকালও এই এলাকায় একই অবস্থা তৈরি হয়েছিল।”

মৌচাক থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে পানি জমে থাকতে দেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক ফয়সাল আতিক।

তিনি জানান, জলাবদ্ধতার কারণে পুরো এলাকায় তীব্র যানজটে আটকা পড়ে শতশত গাড়ি। অনেক স্থানে রাস্তার দু্ই পাশের ফুটপাত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় নাগরিকদের।

কয়েকজন অভিযোগ করেন, পানি জমে থাকায় কিছু কিছু স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে বৈদ্যুতিক শকের শিকার হচ্ছেন মানুষজন; ডেসকোকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার তারা পাচ্ছেন না।  

জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদে জলাবদ্ধতা দেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহসম্পাদক তানজির রহমান।

তিনি জানান, জুরাইনে কমিশনার রোডের মিষ্টির দোকান এলাকা থেকে চেয়ারম্যানবাড়ি পর্যন্ত সড়কটি হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে।

দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে তীব্র যানজটে আটকে থাকা বলাকা পরিবহনের যাত্রী আবদুল আজিজ বলেন, “ভাই, সায়েদাবাদ থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা আগে মালিবাগ যেতে বাসে উঠেছিলাম। তবে রাস্তায় পানি আর যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।”

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তিন নম্বর গেইট সংলগ্ন রাস্তা পানিতে থৈ থৈ করছে। হাঁটু পানিতে রাস্তা চলাচল করছে মানুষ।

রিকশাচালক কামাল মিয়া বলেন, “মামা, বৃষ্টি হইলে এইখানে পানি জমবই। এখানে খ্যাপ নিয়া আইতে চাই না। ভাঙা রাস্তায় প্রায়ই রিকশা আটকাইয়া যায়। অনেক গাড়ি নষ্ট হইয়া যায়।”

মৌচাক মোড় এলাকায় বহুতল মার্কেটের সামনে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। পানির কারণে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও তেমন ভিড় ছিল না।

শান্তিনগর মোডে একটি বেসরকারি রেডিও স্টেশনের সাংবাদিক নাঈম আল জিকো বলেন, শান্তিনগর মোড় থেকে রাজমণি সিনেমা হল পর্যন্ত রাস্তায় পানি জমেছে। এই এলাকায় পানি আর যানজটে অসহায় হয়ে পড়েছি। তীব্র ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি সবাই।”

শান্তিনগর থেকে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দিকে যাওয়ার মোড়ে সড়কের চতুর্দিক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পথচারী পারাপার নিয়ে ‘ব্যবসা’ ফেঁদেছেন রিকশাচালকরা। আর দুই মিনিটের পারাপারে ৫ থেকে ২০ টাকা আয় করে বেশ খুশি তারা।

আমিনুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক জানান, অন্যান্য দিকে তেমন খেপ না থাকলেও এখানে যাত্রী পারাপার করে বেশ আয় হচ্ছে।

“ময়লা পানিতে ভেজা শহরের সব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদেরকে পার করে দিয়ে আমরা কিছু আয় হচ্ছে। তারাও আমাদের দু’চার টাকা বাড়তি দিচ্ছেন।”

শান্তিনগর ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে রিকশাযোগে এ ধরনের পারাপার দেখা গেছে।

বৃষ্টি কমতে পারে বৃহস্পতিবার

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান ভারি ও মাঝারি বর্ষণ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে কমে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের কর্তব্যরত পূর্বাভাস কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বুধবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবারের পর থেকে আবহাওয়া ও বৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তারা আশা করছেন।

“গত কয়েকদিন ধরে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হচ্ছে। বুধবারও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কমে আসবে।”

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

উত্তাল সাগরে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অধিদপ্তর।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।