বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তথ্য দিচ্ছে না পাকিস্তান: হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর পলাতক দুই খুনিকে খুঁজে পেতে পাকিস্তান কোনো সহযোগিতা করছে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 12:52 PM
Updated : 2 Sept 2015, 01:13 PM

বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা যে চালায়, সেই জিল্লুর কর্নেল রশিদের ইন্টারভিউ করে নিয়ে এসেছিলেন। তার মানে সে জানে খুনি রশিদ কোথায়।

“এতে বুঝা যায় রশিদ লিবিয়াতে ছিল এখন পাকিস্তানে আছে। ডালিমও পাকিস্তানে আছে। তাদের খোঁজ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।”

বঙ্গবন্ধুর দুইজন হত্যাকারী অবস্থান করলেও পাকিস্তান তা স্বীকার করে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে সম্পূরক প্রশ্নে জানতে চান আব্দুস শহীদ।

জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “ওই খুনিদের মধ্যে দুইজন আমেরিকায়, একজন কানাডায়, একজন লিবিয়া থেকে এখন পাকিস্তানে; আর দুই জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে।

দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও ছয়জন এখনও পলাতক। তাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

গত ২১ অগাস্ট এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “ডালিম (শরিফুল হক ডালিম) ও রশিদ (খন্দকার আবদুর রশিদ) পাকিস্তানে রয়েছে।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফিরিয়ে আনতে সরকার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

“সভ্য দেশ হয়েও আমেরিকা ও কানাডা কেন খুনিদের আশ্রয় দেয়- জানা নেই,” বলেন তিনি।

খুনিদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো কারণেই হোক, এই সব দেশের সহযোগিতা পাচ্ছি না।

“সভ্য দেশগুলো কেন রেখেছেন, তা বোধগম্য নয়।”

বঙ্গবন্ধু হত্যায় দণ্ডিতদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনকে (ল্যান্সার) ২০১০ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে জানা যায়।

পলাতকদের মধ্যে মোসলেমউদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে গণমাধ্যমের খবর। আব্দুল মাজেদ অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন দেশে থাকছেন।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষায় খোন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর বাতিল হয়।

’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ’৯৬ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চেয়েছিল বলে আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

“তখন একটাই টেলিভিশন ছিল, বিটিভি। সেখানে যখনই কোনো ছবি দেখানো হত সেটা অস্বচ্ছ করে দেওয়া হত। ২-১টি পত্রিকা সাহস করে লিখত, তাদের সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে,” বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী নিয়ে গণমাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ শেখ হাসিনা।

“এবারও অনেক আলোচনা হয়েছে। সমালোচনা যারা করার তারা আছে, সমালোচনা করছে। আমরা চাই সকলে সত্য কথা বলুক। অতিরঞ্জিত কিছু চাই না। সত্য কথা বলুক। নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানুক।”