গ্রামীণ নিয়ে হিলারির দ্বারস্থ ছিলেন ইউনূস

গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সহায়তা চেয়েছিলেন ব্যাংকটির পদচ্যুত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 12:10 PM
Updated : 2 Sept 2015, 12:10 PM

সম্প্রতি হিলারির ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেইলগুলোর বেশ কয়েকটি প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। প্রকাশিত কয়েকটি মেইলে দেখা যায়, গ্রামীণ ব্যাংক প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারকে প্রভাবিত করতে হিলারির কাছে বারংবার তদ্বির করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূসের সঙ্গে ক্লিনটন পরিবারের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হিলারির প্রায় সাত হাজার ইমেইল প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে তিন শতাধিক ইমেইলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ রয়েছে।

বেশকিছু মেইলে হিলারির জবাব গোপন রেখেছে তারা।

হিলারির কাছে পৌঁছুতে মেলান ভারভিয়ার নামে একজন কর্মকর্তার কাছে মেইল পাঠিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এমন একটি ইমেইল হিলারিকে পাঠিয়ে মেলান লিখেন, “ইউনূস এখনো গ্রামীণ নিয়ে উদ্বিগ্ন।”

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে হিলারির বৈঠক এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শেখ হাসিনার অংশ গ্রহণের ফাঁকে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে ইউনূসের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই মেইলে লেখা হয়েছে, “প্রিয় মেলান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদের আমেরিকা সফর নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ১৬ সেপ্টেম্বর হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সে সময় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যু নিয়ে আলোচনার অনুরোধ রইল।

“ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে আমি আমাদের সমস্যা সম্পর্কে জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছি। কিন্তু ছয় সপ্তাহ ধরে কোনো সাড়া নেই।

“আমি প্রেসিডেন্টের স্বাধীনতা পদক (প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম) পাওয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানালেও প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের পক্ষ থেকে টু শব্দও করা হয়নি। সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন সমস্যা কতটা জটিল রূপ নিয়েছে।

“আমার মনে হয় আমি এ ব্যাপারে আপনাকে ধারণা দিতে এবং কী করতে হবে তা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারব।

“সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। এইচকে (হিলারি) শুভেচ্ছা দেবেন। শিগগিরই দেখা হবে।- ইউনূস।”

মেইলটি পাঠানো হয় ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।

ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সব সংবাদপত্রই একই ধরনের সংবাদ ছেপেছে। এটি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যের ওপর। আমার নাম উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ আমাকে নিয়েই।

“সম্ভব হলে আমার সম্পর্কে তার ভয়ঙ্কর মনোভাব দূর করার উপায় বের করুন। আমি আপনাকে শান্তির দূত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে এটা ভয়াবহ রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে আসবেন এবং তখন সম্ভবত সেক্রেটারি এইচ (হিলারি) এর সঙ্গে তার দেখা হবে।”

মেইলের নিচে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটি তুলে দেওয়া হয়।

‘ইউনূস ও হাসিনার চলমান বিরোধ’ শিরোনাম দিয়ে মেলান মেইলটি পাঠান হিলারিকে।

২০ সেপ্টেম্বর এর জবাবে হিলারি লেখেন, “আগামীকাল ইউনূসের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা হিলটন ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলব। তিনি আমার সঙ্গে সেখানে দেখা করতে চান। সেখানে আমি বিষয়টি সম্পর্কে আরো জানব।”

পরদিন মেলান হিলারিকে জবাবে লেখেন, “আমি ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) সবকিছু কঠিন করে তুলছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্প নিয়ে আপনাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে সরকারের সায় মেলেনি।

“উনি আশা করছেন, উনার যে রাজনীতিতে কোনো আগ্রহ নেই, সে ব্যাপারে তাকে (প্রধানমন্ত্রী) আশ্বস্ত করার পথ পাওয়া যাবে এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণের মতো তাকেও দেশগড়ার কাজে লাগাতে পারবেন। এখানে ব্যক্তিগত বিরোধিতার যে গভীরতা আছে তা উনি (ইউনূস) পরিমাপ করতে পারছেন না। অগ্রগতি খুবই খারাপ।”

নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনআরকে ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর ‘কট ইন মাইক্রোক্রেডিট’ নামে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রর ওপর ভিত্তি করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টিও উঠে এসেছে হিলারি-ইউনূস মেইল চালাচালিতে।      

বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান ইউনূস।