চোরাই পণ্য আটকে উল্লম্ফন

গত দুই বছরে হঠাৎ করেই দেশের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে চোরাচালানের পণ্য ধরা পড়ার ঘটনা কয়েক ‍গুণ বেড়ে গেছে, যাকে নিজেদের দক্ষতা বাড়ার ফল হিসাবে দেখাচ্ছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 07:24 AM
Updated : 2 Sept 2015, 12:06 PM

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ মাসে দেশের বিভিন্ন বন্দরে গোয়েন্দারা ৫০৫ কোটি টাকার স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও আমদানিনিষিদ্ধ ওষুধ এবং ২৭ হাজার ৪৮৯ কার্টন বিদেশি সিগারেট আটক করেছেন।

এর আগের নয় বছরে সব মিলিয়ে ৫৪ কোটি টাকার পণ্য ও ৩ হাজার ২৯৭ কার্টন বিদেশি সিগারেট আটকাতে পেরেছিলেন তারা। সম্প্রতি অধিদপ্তরের নতুন অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রকাশ করে মহাপরিচালক মইনুল খান দাবি করেন, শুল্ক গোয়েন্দাদের তৎপরতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নজরদারির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চোরাই পথে আনা পণ্য আটকের ক্ষেত্রে এই সাফল্য মিলছে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নকল প্রসাধনী, গার্মেন্ট পণ্য ও মোবাইল ফোন সেট আটকের ঘটনাও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

এসব ঘটনায় গত ২৫ মাসে অধিদপ্তর এক হাজার ৯২২টি মামলা করেছে বলে মহা পরিচালক জানান।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়ার কারণে পণ্য আটক বেড়েছে, না কি দেশে চোরাচালানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আটকের পরিমাণ বেড়েছে- তা ওই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি দেশে ভোজ্য তেলের ড্রামে মিশিয়ে তরল কোকেন এবং বিমানবন্দরে অভিনব পন্থায় স্বর্ণের বড় বড় চালান আটকের ঘটনা ঘটেছে। ইদানিং বাংলাদেশ চোরাই পণ্য পাচারের ‘আন্তর্জাতিক রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে মোট পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৭ কেজি ৪৬২ গ্রাম স্বর্ণ আটক করে অধিদপ্তর।

আর ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস (জুলাই) পর্যন্ত ২৫ মাসেই শুল্ক গোয়েন্দারা ৪৩৭ কোটি টাকা মূল্যের ৯৩০ কেজি স্বর্ণ আটক করেছেন। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১০৮ জনকে।

গত ২৫ মাসে ৪০ কোটি টাকা মূল্যমানের সৌদি রিয়াল ও ভারতীয় মুদ্রাসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এর আগের নয় বছরে আটক হয়েছিল ২২ কোটি টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা।

২০০৪-০৫ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা দামের বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য আটকের বিপরীতে গত ২৫ মাসে ১৭ কোটি ৫ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স পণ্য গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে মোবাইল ফোন, ব্যাটারি, পুরনো কম্পিউটার ও হার্ডডিস্ক রয়েছে। 

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৫ মাসে ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকার আমদানি নিষিদ্ধ বিভিন্ন ওষুধ আটক করেছেন গোয়েন্দারা। আগের নয় বছরে আটকের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার।

এছাড়া গত ২৫ মাসে ২৭ হাজার ৪৮৯ কার্টন বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। আগের নয় বছরে ধরা পড়েছিল ৩ হাজার ২৯৭ কার্টন।

মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য আটক করে গত ২৫ মাসে ১২৭ কোটি টাকার অতিরিক্ত শুল্ক আদায় হয়েছে। আগের নয় বছরে এর পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি টাকা।