৫৭ ধারা: আরেকটি রিট খারিজ 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট আবেদন খারিজ করেছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 06:27 AM
Updated : 2 Sept 2015, 01:15 PM

রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা জাকির হোসেনের করা ওই রিট আবেদনের ওপর তিন দিন শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক ও শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত  জাহান।

আদেশের পর শিশির মনির বলেন, “আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। এই আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর আপিল করা হবে।” 

শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবীরা বলেন,  এ আইনের ৫৭ ধারায় প্রশাসনকে ‘একচ্ছত্র ক্ষমতা’ দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সঙ্গে ‘সরাসরি সাংঘর্ষিক’।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি, আইনের ওই ধারা সংবিধানের সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক নয়’। এই ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলো  প্রতিকারের জন্য আইনের বিধানগুলো ‘যথার্থ’।

২০০৬ সালে পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।

৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে ‘সমান অধিকার’ দেওয়া হয়েছে। ৩১ অনুচ্ছেদে ‘আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার’, ৩২ অনুচ্ছেদে ‘জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণ’ এবং ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’ এবং ‘বাক-স্বাধীনতার’ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ফেইসবুকে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে এক সাংবাদিককে এ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা গ্রেপ্তারের ওই ঘটনাকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ‘অপব্যবহার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকেও ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হয়।

এরপর এ বিষয়ে হাই কোর্টে তিনটি রিট আবেদন হয়, যার একটি করেন জাকির হোসেন। আইনের ৫৭ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয় তার আবেদনে।

চলতি বছরের ২৪ জুলাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে জাকিরের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তার সাবেক স্ত্রী। তাতে ফেইসবুকে ছবি এবং বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে লেখালেখি করে হয়রানি ও হেয় করার অভিযোগ আনা হয়।

এই মামলায় গত ১০ অগাস্ট বিচারিক আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এরপর ২৬ অগাস্ট তিনি এই রিট আবেদন করেন। ৫৭ ধারায় করা মামলাটির কার্যকম স্থগিতের আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি।

এ আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীও একটি রিট আবেদন করেছিলেন, যা ৩০ অগাস্ট হাই কোর্টের আরেক বেঞ্চে খারিজ হয়ে যায়।

এছাড়া ৫৭ ধারার বৈধতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখকসহ ১১ জনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ রুল দেয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পাঁচ বছর আগের রুল শুনানির অপেক্ষায়

তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৪৬ ও ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালেও একটি রিট আবেদন হয়েছিল।

ওই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ২৫ জুলাই বিচারপতি মো. ইমান আলী (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারক)ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের (এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান) হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলও দিয়েছিল।

তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৪৬ ও ৫৭ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

বিটিআরসি, আইন সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, তথ্য ও যোগাযোগ সচিবকে এর জবাব দিতে বলা হয়।

ওই বছরের ৬ জুন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেইসবুক বাংলাদেশে সাময়িক বন্ধ রাখা হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ধারা দুটি চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী আরাফাত হোসেন খান, কাজী আতাউল আল ওসমান ও রোকেয়া চৌধুরী ওই রিট আবেদন করেন।

আরাফাত হোসেন খান ওই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুল হওয়ার পর বেঞ্চের এক বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারক এবং অপর বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। রুল ইস্যু করা বেঞ্চে না থাকায় আর শুনানি হয়নি। তবে সম্প্রতি বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চে এসেছে।”