মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে এনআইডি কার্যালয়ে গিয়ে অব্যবস্থাপনার এই চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন, এনআইডি উইং ও প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই দুর্ভোগ, যা কার্যত স্বীকারও করেছেন কর্মকর্তারা।
প্রথম দিন সকালে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি এনআইডি উইং। দুপুরের পর থেকে সংশ্লিষ্ট ডেস্কগুলো আবেদন জমা নেওয়ার কাজ শুরু করে।
সব মিলিয়ে প্রথম দিন প্রায় ২৫০টি আবেদন জমা পড়লেও অনেককেই আবেদন জমা না দিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে।
১৫ বছর মেয়াদী জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নের জন্য ১০০ টাকা ফি নির্ধারিত হয়েছে। তবে এটি এখন করার প্রয়োজন নেই।
আর ৩০ দিনের মধ্যে পরিচয়পত্র সংশোধন কিংবা অনুলিপি পাওয়ার আবেদনে ২০০ টাকা ফি দিতে হবে। কিন্তু একই সেবা জরুরি ভিত্তিতে (৭ দিন) পেতে চাইলে ব্যয় করতে হবে ৩০০ টাকা। একাধিকবার আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা ফি নির্ধারিত হয়েছে।
কিন্তু এনআইডি কার্যালয়ে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে এসে রাজধানীর শ্যামপুরের লতা আখতার জানতে পারেন, তাকে জরুরি সময়ের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, “আমার দরকারে আমি ২০০ টাকা দিতে রাজি আছি। কিন্তু এরা ২০০ টাকা নিবে না; ৩০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হইল। এরসঙ্গে আবার ভ্যাট আছে।”
ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে তাকে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়।
বেলা ২টা পর্যন্ত ছোটাছুটি করে ক্ষুব্ধ লতা বলেন, “পাসপোর্ট অফিসের পাশের ব্যাংকে গেছি, তারা টাকা নিবে না, আবার আরেক সোনালী ব্যাংকে গিয়া টাকা দিলাম।”
হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্রের অনুলিপির জন্য মতিঝিল থেকে আসা আল আমিনও জানালেন ক্ষোভের কথা।
“এখানে দেখি চরম অব্যবস্থাপনা। সাধারণ সময়ের জন্য টাকা জমা দেব, কিন্তু বলে দেওয়া হলো জরুরি সময়ের ফি ছাড়া এখানে আবেদন জমা নেবে না। জেলা নির্বাচন অফিসে যেতে বলে কেউ কেউ।”
গজারিয়ার ফারুখ হোসেন পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করতে এসে কাউকে না পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন।
ব্যাংকে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তাকে জানানো হয়, সেখানে আবেদন ফরম মিলছে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিচতলায় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ফখরুল ইসলাম টাকা জমা দেওয়ার পর আবেদন ফরম বিতরণ করছিলেন, যা পূরণ করে জমা দেন সেবাগ্রহীতারা।
এখানে ঝামেলা হলে তিনিই আগতদের জেলা অফিসে গিয়ে আবেদন করতে বলছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইডি শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, “ডেস্কের লোকজন ছিল না সকালে। আর এখন টাকা ছাড়া ফরম নিচ্ছে না। লোকজনকে তো আমরা জানাব না, ইসি জানাবে। সমন্বয়হীনতায় এ দুর্ভোগ তো হবেই। টাকা দিয়ে যেন মানুষের ভোগান্তিই বাড়ছে।”
ঢাকার জেলা নির্বাচন অফিসেও একই ধরনের আবেদন জমা নেওয়ার কথা। সেখানেও প্রথমদিন হাতেগোনা কয়েকজন আবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অব্যবস্থাপনা আর মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেসন্স) মহসীন আলী বলেন, “ফি নেওয়ার বিষয়টি অনেক নাগরিক জানত না, আমাদেরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল না। প্রথম দিন বলেই একটু ঝামেলা-ভোগান্তি হয়েছে।”
আগামী সপ্তাহ থেকে সুচারুভাবে কাজ চলবে বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা এ কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, জনভোগান্তি কমানোর জন্যে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ফি জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ নির্ধারিত ফি সোনালী ব্যাংকের সকল শাখায় জমা দেওয়া যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখায় ও সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি শাখাগুলোতে চালানের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে।”
তাছাড়া ‘সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়’ এর অনুকূলে পে-অর্ডার /ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমেও ফি পরিশোধ করার অনুরোধ করেন তিনি।