৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে না ‘রানা প্লাজা’

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমা আক্তারকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজার’ প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি ৬ সেপ্টেম্বর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2015, 03:10 PM
Updated : 31 August 2015, 03:39 PM

ফলে নির্ধারিত দিন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এই সিনেমাটির যে কোনও মাধ্যমে প্রদর্শন আটকে গেল।

হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চলচ্চিত্রটির প্রয়োজকের করা আবেদনটি সোমবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৪ অগাস্ট হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা ও রুল দেয়। একইসঙ্গে ওই চলচ্চিত্রের জন্য সেন্সর বোর্ডের দেওয়া সনদের কার্যকারিতাও একই সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।

হাই কোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে যান চলচ্চিত্রের প্রযোজক শামীম আক্তার।

এই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও এ এম আমিন উদ্দিন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত স্থগিতাদেশ দেননি।”

আবেদনটি ৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন বা কোনো মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে সম্প্রচার বা প্রচার করা যাবে না।”

শামীম আক্তার প্রযোজিত ও নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড।

বিভিন্ন দৃশ্যের কারণে এ চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দীর্ঘদিন আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ‘রানা প্লাজাকে’ সনদপত্র দেয়।

এই সিনেমায় ‘ভীতিকর চিত্র’ দেখানো হয়েছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম হাই কোর্টে ওই রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট রুল দেয়।

রুলে চলচ্চিত্রটির সেন্সর সনদ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

তথ্য সচিব, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান, এফডিসির এমডি ও চলচ্চিত্রটির প্রযোজককে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশের আট তলা ভবন ‘রানা প্লাজা’ ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক; যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

ধসের ১৭ দিনের মাথায় ১০ মে বিকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রেশমা আক্তার নামে এক পোশাক কর্মীকে জীবিত উদ্ধার করা হলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

ওই বছরই রানা প্লাজা ধস ও রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন পরিচালক নজরুল ইসলাম খান।

এতে পোশাকশ্রমিক ‘রেশমা’ চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী পরীমনি। তার বিপরীতে ‘টিটু’ চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা সায়মন সাদিক।

কিন্তু চলচ্চিত্রটির কাহিনি ও বেশ কিছু দৃশ্য পোশাক শিল্প খাতকে ‘অশান্ত করে তুলতে পারে’ বলে অভিযোগ পাওয়ার পর সেন্সর বোর্ড গত বছর সিনেমাটি আটকে দেয়।

দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ‘রানা প্লাজা’ সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেলেও মুক্তির প্রস্তুতির মধ্যেই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪ জুলাই প্রদর্শনের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা আসে।