ফেলানী হত্যা: ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের সুপারিশ

বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুনের পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারত সরকারকে সুপারিশ করেছে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

আহসান হাবীব নীলুসুবীর ভৌমিক ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2015, 09:48 AM
Updated : 31 August 2015, 01:18 PM

এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল- ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে কমিশনের এক চিঠিতে। 

ওই চিঠিতে বলা হয়, “আমরা জানি, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে খুবই স্পর্শকাতর একটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনের সময় তাদের অবশ্যই শৃঙ্খলা ও নীতি অনুসরণ করতে হবে।”

মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে বিএসএফের একটি নির্দেশনার কথাও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষীদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।

“যে এই ঘটনার শিকার হয়েছে, সে ছিল একটি নিরস্ত্র বালিকা। যে কনস্টেবল তার দিকে গুলি চালিয়েছিল, নিশ্চিতভাবেই তিনি বিএসএফ সদরদপ্তরের ওই নির্দেশনা মানেননি।”

ক্ষতিপূরণের সুপারিশের খবর শুনে কুড়িগ্রামের বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টাকা পয়সা চাই না। আগে বিচার চাই। ফাঁসি চাই।”

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত হয়ে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারায় কিশোরী ফেলানী।

কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি বিএসএফের কনস্টেবেল অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়।

ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরনো রায় বহাল রাখে।

এরপর বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সহযোগিতায় গত ১৪ অগাস্ট ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। আগামী ৬ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও মাসুমের পক্ষ থেকে ভারতের মানবাধিকার কমিশনে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হয়, যার প্রেক্ষিতে এই ক্ষতিপূরণের সুপারিশ এসেছে।

ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে আপাতত অগ্রসর না হতে মানবাধিকার কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে কমিশন তাতে সাড়া দেয়নি। 

কমিশন বলেছে, “এ পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা থেকে কমিশন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, একটি নিরস্ত্র মেয়েকে গুলি করার এই ঘটনা কোনো যুক্তিতেই বৈধতা পেতে পারে না।”

মাসুমের পরিচালক কিরীটি রায় বলেন, “সন্তানহারা বাবা-মায়ের ক্ষতি টাকার অংকে পূরণ হয় না। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের এই সিদ্ধান্তে প্রমাণ হল, বিএসএফ যা করেছে অপরাধ। এটি একটি নৈতিক বিজয়।”  

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, বিএসএফের উচিৎ, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে ‘বিনা উসকানিতে হত্যার’ অভিযোগে ওই কনস্টেবলকে বিচারের মুখোমুখি করা।”

বিএসএফের আদালতে ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, “এর মধ্য দিয়ে একটি সত্য প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হল যে, ফেলানী হত্যার শিকার হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ তারা দিয়েছে। সেই সঙ্গে এর ভিতর দিয়ে আসামির উপর ফৌজদারী দায় যে যুক্তিগ্রাহ্য, তাও নতুন করে প্রমাণিত হল।”

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, “টাকা দিয়ে মেয়েকে ফিরে পাব না। কাজেই আগে মেয়ে হত্যার বিচার চাই। খুনি অমিয় ঘোষের মৃত্যুদণ্ড চাই।”