সহকর্মীদের উপর ‘হামলাকারীদের’ পক্ষে শাবি উপাচার্য

যাদের হামলাকারী বলে শিক্ষকরা চিহ্নিত করেছেন, সেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকারী বলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2015, 02:29 PM
Updated : 30 August 2015, 04:48 PM

শিক্ষকদের উপর হামলার কোনো অভিযোগ পাননি বলেও দাবি করেছেন উপাচার্য। তিনি পাল্টা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তার উপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন।

অভিযোগের মুখে থাকা ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ শিক্ষকদের উপর হামলার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করবেন।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে সোমবার আধাবেলা কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে থাকা সরকার সমর্থক শিক্ষকদের একাংশ।

আমিনুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা রোববার সকালে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের আগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে সেখানে হামলা চালায় একদল শিক্ষার্থী।

ছাত্রলীগের স্লোগান তুলে ওই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ব্যানার কেড়ে নেয়। শিক্ষকদের গলা ধাক্কা দিয়ে এবং মারধর করে সরিয়ে দেয় তারা। এই ফাঁকে উপাচার্য আমিনুল হক ভবনে ঢুকে নিজের কার্যালয়ে যান।

এনিয়ে দিনভর উত্তেজনার মধ্যে বিকালে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, “হামলা তো আমার উপর হয়েছে। আমি কার কাছে বিচার চাইব?

“আমাকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আমি একাডেমিক কাউন্সিল করতে এসেছি। শিক্ষকদের হামলায় আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি। শিক্ষকদের বাধায় আমি রাস্তা দিয়ে অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি। আমাকে কাদা মাটি ও ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে আসতে হয়েছে।”

বোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে অধ্যাপক আমিনুল হক ‘ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়’ বললেও শিক্ষকদের উপর হামলার কোনো অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেন।

“শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে- এই রকম কোনো অভিযোগ কোনো শিক্ষক আমার কাছে করেননি। এই রকম কোনো অভিযোগ আমার কাছে এলে আমি অবশ্যই তার বিচার করব।”

আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম দাবি করেছেন, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলায় অন্তত সাতজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।

শিক্ষকদের এই আন্দোলন সমর্থনকারী কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেছেন, “এখানে যে ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা চালিয়েছে, তারা আমার ছাত্র হয়ে থাকলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিৎ।”

হামলার শিকার শিক্ষকদের অভিযোগ, উপাচার্যের মদদে ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের উপর চড়াও হয়েছিল।

ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ করে উপাচার্য আমিনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্ররা এসেছে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে। তারা নিজ উদ্যোগে এসেছে।”

অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া (ফাইল ছবি)

বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন, “আজ এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত ১২ এপ্রিল থেকে আন্দোলনে রয়েছে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের একাংশের জোট ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।

তাদের এ আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ‘অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তার চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে উপাচার্যের পক্ষে রয়েছেন সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের আরেকটি অংশ।

অচলাবস্থা কাটাতে দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নিয়োগ, নতুন ব্যবস্থা চালু বা কাউকে নতুন কোনো পদে দায়িত্ব দিতে নিষেধ করে উপাচার্যের ক্ষমতা কার্যত খর্বও করা হয়েছে। তারপরও উপাচার্য পদ না ছাড়ায় শিক্ষকরাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

দায় নিতে নারাজ ছাত্রলীগ

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মারধরের ঘটনার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

হামলার ঘটনার পর শাবি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ বলেন, “হামলার ঘটনাটি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়।

“ছাত্রলীগের কেউ এই ঘটনায় জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শিক্ষকদের উপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানকে হাত বিশেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

শিক্ষকদের উপর চড়াও ছাত্রলীগের একদল কর্মী

এ বিষয়ে সঞ্জীবন বলেন, “সকালে ভিসি ভবনের সামনে ছাত্ররা জমায়েত হলে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আমাদের ডেকেছেন বলে আমি ও সাধারণ সম্পাদক সেখানে গিয়েছিলাম।”

ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবু সাঈদ, সহ সভাপতি অঞ্জন রায় ও সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সবুজ হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরো কয়েকজন কর্মী।

সে বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন বলেন, “বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।”

সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহসভাপতি আবু সাঈদ, সহসভাপতি অঞ্জন রায়, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ও ছাত্রলীগ নেতা বিজিত লাল উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

হামলার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রতিবাদ মিছিল করবে শিক্ষকরা।

“এছাড়া উপাচার্য অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং তা আরও কঠোরতর হবে,” হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম।