আইসিটি আইন: ঘাটতি পূরণের পক্ষে বেনজীর

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনকে যুগোপযোগী বললেও ঘাটতি থাকলে তা দূর করতে পৃথক সিডিউল সংযোজন করা যেতে পারে বলে মনে করেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 08:23 PM
Updated : 30 August 2015, 04:30 AM

র‌্যাব প্রধান বলেছেন, যে সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই সুরক্ষাকে উড়িয়ে না দিয়ে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মত দেন।

শুরুতে অতিথিদের সূচনা বক্তব্যের পরপরই সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী দর্শকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নেন।

ব্রিটিশ স্কুল অব ল’ এর শিক্ষার্থী ফাহাদ গালিব প্রশ্ন রাখেন, বাংলাদেশের পেনাল কোডে অপরাধের সংজ্ঞা এমনভাবে দেওয়া হয় যেন অপরাধ করার আগেই একজন মানুষ বুঝতে পারে কী কী করলে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। তবে আইসিটি আইনের ৫৭(১) অনুচ্ছেদে অপরাধের ব্যাখ্যায় কোনো উদাহরণ নেই। তাহলে অপরাধের আগে মানুষ কীভাবে বুঝবে কোনটা অপরাধ?  

এই প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “আইসিটি ও পেনাল কোডের মধ্যে একটা ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সেটা নিয়ে বলছি আপনারা দেখবেন যে আমাদের দণ্ডবিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধের কথা বলা থাকে। সেই অপরাধের উপাদানগুলোর কথা উল্লেখ থাকে। অন্য যে কোনো আইনে একটি প্রস্তাব থাকে, যেখানে ব্যাখ্যা করা থাকে প্রত্যেকটা বিষয়ের সংজ্ঞা।

“যেমন আইসিটি আইনটি আপনারা দেখেন আগ্রহী পক্ষ, প্রতিপক্ষ, আত্মসংযোগ, কমিশন, কমিশনার, ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতিবন্ধকতা, টেলিযোগাযোগ সেবা, এগুলো কিন্তু প্রিয়াম্বলে (প্রস্তাবে) অলরেডি ব্যাখ্যা করা আছে।

“যখন আইনের ভেতরে কোনো একটি কাজকে অপরাধ বলা হচ্ছে এবং এটাকে শাস্তিযোগ্য বলা হচ্ছে তখনই সেটা অপরাধ। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে এটা পেনাল কোডে থাকতে হবে। অনেক পৃথক আইন আছে, প্রত্যেকটি পৃথক আইনের শাস্তি আলাদাভাবে দেওয়া আছে। …প্রিয়াম্বলে ‍শুধু কিছু শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যাতে অস্পষ্টতা বা জটিলতা না হয় সেজন্য।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনি যখন কাজটি করে ফেলছেন সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের মধ্যে চলে যাচ্ছে। পেনাল কোডে ধর্ষণের শাস্তি আছে, হত্যার শাস্তি আছে। কাজেই দুটোকে আলাদাভাবেই দেখতে হবে।”

এর সঙ্গে যোগ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “আইন কিন্তু আছে। আইনে শাস্তির বর্ণনা দেওয়া আছে। আমি আরেকটু বেশি গুরুত্ব দিতে চাই আমাদের সামাজিক সচেতনতার দিকে।”

এ বিষয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমি জানি না ফাহাদ (প্রশ্নকারী) আইনটি পড়েছেন কি না।”

৫৭ ধারায় বলা হয়েছে,  ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ।

বেনজীর বলেন, “এখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা, আগেই এটা প্রচার করছে বা না করছে,.. যেটি মিথ্যা সেটি তো আমি জানি, যা অশ্লীল। শ্লীলতা ও অশ্লীলতার আবার একটি ডেফিনেশনের বিষয় আছে। কারণ শ্লীলতা, অশ্লীলতা আবার সময়, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, মূল্যবোধ ও পদ্ধতির পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।ফলে এটা ডিফাইন করা ভেরি ডিফিকাল্ট।”

আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক যুক্ত করেন যে কারণে এটা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে কারণ হচ্ছে এটার অপব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে করা হয়েছে।

র‌্যাব প্রধান বলেন, “এটার অপব্যবহার এভাবে আমি বলতে চাই না। আমি বলতে চাচ্ছি আইনে কোথাও অষ্পষ্টতা আছে কি না। বলা হয়েছে অশ্লীল বিষয়।…কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেন নুড ছবি কী অশ্লীল না শ্লীল। একজন পেইন্টারের কাছে সেটি শিল্পকর্ম হতে পারে।কিন্তু আমার সাত বছরের বাচ্চার সামনে এটা কি শিল্পকর্ম? এটা সব সময় সাবজেক্টিভ না, ইট স্যুড বি অবজেক্টিভ। …এন্ড অফ দ্য ডে আমার বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে হবে।”

আইনটিকে ‘যথেষ্ট ভালো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনার এ পর্যায়ে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির প্রশ্ন করেন, “যেখানে এটি খুবই আপেক্ষিক ব্যপার, এটা কীভাবে ব্যাখ্যা হবে, বিরাট একটা প্রশ্ন সবার মধ্যে।আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা, এটা কি অবাধ বিবেচনা করা উচিত?

জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমরা মনে করি, যদি এখানে কোনো অস্পষ্টতা থেকে থাকে, আমি আমার বক্তব্যে বলেছি অ্যা সেপারেট সিডিউল ক্যান বি অ্যাটাচড উইথ দিস ল। তবে সেটা করলে সরকারের সমস্যা হবে, প্রতি মাসেই হয়তো এই সিডিউলটা আপডেট করতে হবে। এটা করা যেতে পারে, আবার এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে যদি অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

মুক্তচিন্তার কথা বলে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখারও পরামর্শ দেন তিনি।

র‌্যাব প্রধান বলেন, “একটা সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই সুরক্ষাকে উড়িয়ে না দিয়ে কোনো ধরনের গ্যাপ থাকলে তা পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে।”