নিরাপদ ইন্টারনেট: সব সংস্থার সমন্বয়ের তাগিদ

নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে এক গোলটেবিল আলোচনায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 06:16 PM
Updated : 31 August 2015, 03:16 PM

বৈঠকে ইন্টারনেটের অপব্যবহার নিয়ে যেমন উদ্বেগ এসেছে, উদ্যোগের কথাও বলেছেন নীতি নির্ধারকরা। 

শনিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজক ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

যুগোপযোগী ইন্টারনেট ‘প্রতিরক্ষা’ তৈরিতে র‌্যাব, পুলিশ, বিটিআরসি এবং অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার পাশাপাশি সেবা বিনিময়ের বিষয়ও উঠে আসে আলোচনায়।

এছাড়া জনগণের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করে বিটিআরসির নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা দৃশ্যমান করার উপর জোর দেন আলোচকরা।

আলোচনার শুরুতেই সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেন।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী

মো. এমদাদ উল বারী

একে একে তিনি সাইবার অপরাধের নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আলোচক প্যানেলে থাকা অতিথিদের মতামত জানতে চান। দর্শক সারিতে থেকেও কেউ কেউ নিজেদের অভিমত এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সাইবার অপরাধের বিষয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “ইন্টারনেট অপরাধীদের অনেক সময় ট্র্যাক করা যায় না; কারো পক্ষে তা একা করাও সম্ভব নয়।

“কোনো এজেন্সির পক্ষে পুলিশ বা র‌্যাব বা বিটিআরসির পক্ষে সম্ভব নয় যুগোপযোগী একটি ডিফেন্স তৈরি করা।”

এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, কোথাও কেউ একা পারেনি। আমাদেরও সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।”

“সবচেয়ে বড় জিনিস আমাদের সমন্বয় বাড়াতে হবে। আমি মনে করি সব সংস্থার সব সক্ষমতা তৈরি করার দরকার নেই, আমাদের রি-অ্যাকটিভ ও প্রো-অ্যাকটিভ দুই ধরনের সক্ষমতা তৈরি করা দরকার হবে। প্রো-অ্যাকটিভের মধ্যে প্রতিরোধ আর রি-অ্যাকটিভের মধ্যে প্রতিকার বা তদন্ত থাকবে।

“এগুলো হয়তো সবার জন্য মোটামুটি দরকার হবে, আমি যদি র‌্যাব-পুলিশের দিকে তাকাই তাদের মোটামুটি দরকার হবে তদন্ত, যেন শনাক্ত করতে পারে। আমি যদি ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের দিকে তাকাই তাদের দরকার হবে প্রতিকার, তাদের দরকার হবে মনিটরিং ও সার্ভিলেন্স। এই ধরনের বিষয়ে জোর দিতে হবে।”

এমদাদ উল বারী জানান, ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন (আইএসএস) প্রযুক্তি চালু করলে বিটিআরসির পক্ষে সম্ভব মনিটর করা, বিটিআরসির পক্ষে অন্যদের ডিজিটাল বা নেটওয়ার্ক ফরেনসিক সার্ভিস দেওয়াও সম্ভব।

সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়েও উপর জোর দিয়ে বারী বলেন, “সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা একটি কো-অর্ডিনেটিং বডি করি, র‌্যাব কি সিস্টেম তৈরি করেছে, তারা কতটুকু অন্যদের কাছে নিতে পারে; বিটিআরসি কি সিস্টেম করতে পেরেছে, কতটুকু দিতে পারে বা নিতে পারে- সে বিষয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন অ্যাপেক্স বডি দরকার।”

জুনাইদ আহমেদ পলক

তারানা হালিম

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও সব সংস্থার সমন্বয়ে তাগিদ দেন।

বিটিআরসিরি সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তারানা বলেন, “বিটিআরসিকে অনুরোধ করছি যেন তাদের রেগুলেটরি পাওয়ার দ্রুততার সাথে, দক্ষতার সাথে এবং কার্যকর ও দৃশ্যমানভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করে।

“যেন তারা (জনগণ) বুঝতে পারেন অভিযোগগুলো তারা (বিটিআরসি) পাচ্ছেনই না আবার কাজও করছেন এর ভিত্তিতে। রেগুলটরি পাওয়ার যেন দৃশ্যমান হয়।”

জবাবে বারী বলেন, “এখানে ইন্ডাস্ট্রিতে যারা আছেন তারা ভালোভাবে জানেন রেগুলেটর সবার সাথে কতটা ক্লোজলি কাজ করে থাকে, আমাদের পোর্টালে টেলিফোনের মাধ্যমে, ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া যায় এবং যোগাযোগ করা যায়।”

দুইজন আলোচকের বক্তব্যে যখন সমন্বয়ের সুর বিদ্যমান, তখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেখিয়ে দিলেন ব্যবস্থা নেওয়ার পথ। 

তিনি বলেন, “সবাই বলছেন সমন্বয় প্রয়োজন। সম্বয়ের একটা সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই। ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ইন্টারনেট মেলা করছি।”

“ক্লাউড সোর্স নামে মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছি। র‌্যাবের ডিজিকে এর অ্যাডমিন শেয়ার করব। এই ক্লাউড সোর্সই হবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্লাটফর্ম। এখানে যে কেউই তার ছবি এসএমএস দিয়ে তথ্য শেয়ার করবে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। সবাই মিলেই ক্লাউড সোর্সকে ব্যবহার করব।”

উপস্থিত দর্শকদের একাংশ

তারানা বলেন, “তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশকে উন্নয়নের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন আইটিতে পুরস্কার পাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ভাল ও খারাপ দিক আছে। নেতিবাচক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করি।

যেকোনো তথ্যই যাচাই করে মন্তব্য করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর ভিত্তিতে অনেকে বড় বড় জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটতে পারে, অনেক সম্মানহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।

বৈঠকে আলোচক প্যানেলে ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক নোভা আহমেদ এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের বিভাগীয় প্রধান (যোগাযোগ, প্রচার ও প্রচারণা) সীমা ইসলাম।

গোলটেবিল আলোচনা শেষে দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক মো. হাবিব উল্লাহ ডন ‘হ্যালো. বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরর ডটকম’র শিশু সাংবাদিকদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেন।

র‌্যাডিসনের এই অনুষ্ঠানটি একাত্তর টেলিভিশন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে সরাসরি দেখানো হয়।