দখল নয়, ন্যায্যমূল্যে মন্ত্রীর কাছে বাড়ি বিক্রি করেছি: অরুণ গুহ

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের এক হিন্দু পরিবারের জমি জোর করে কেনার অভিযোগকেকে ‘মিথ্যাচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জমির মালিক অরুণ গুহ মজুমদার।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 03:56 PM
Updated : 29 August 2015, 03:56 PM

তিনি বলেছেন, জমি বিক্রির জন্য মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের জোর করা হয়নি, তিনি স্বেচ্ছায় ও ন্যায্যমূল্যে জমিটি বিক্রি করেছেন।

গত ৬ অগাস্ট ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী মোশাররফের বিরুদ্ধে ভাজনডাঙার জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহ মজুমদারের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি দখলের অভিযোগ আনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের নেতা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, জমির বর্তমান মালিক অরুণের কাছ থেকে মন্ত্রী জোর করে বায়নানামায় সই নিয়েছেন।

ভারত থেকে ফিরেই এবিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের নামে অভিযোগ উত্থাপনকারীরা ‘ফায়দা লুটতে চাচ্ছে’ বলে পাল্টা অভিযোগ করেন অরুণ গুহ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি পৈতৃক বাড়িটি ন্যায্যমূল্যে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে বিক্রি করেছি। দখলের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? আমি স্বেচ্ছায় বাড়িটি বিক্রি করেছি, ন্যায্যমূল্য পেয়েছি।”

নিজের আইনজীবী সুবল সাহাকে সঙ্গে নিয়ে তিনিই মন্ত্রীর কাছে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে যান জানিয়ে অরুণ বলেন, “মন্ত্রী মহোদয় কিন্তু প্রথমে কিনতেও চাননি। এখানে জোরাজুরির প্রশ্ন আসছে কেন? কারা রটাচ্ছে এসব? তাদের নিশ্চয়ই অন্য মতলব আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে অরুণ গুহ মজুমদার বলেন, তার বাড়ি দয়াময়ী আশ্রম মন্ত্রী দখল করে নিয়েছেন বলে রানা দাশগুপ্ত যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন- তা মিথ্যা ও বানোয়াট।

“রানা দাশগুপ্ত যা বলেছেন, সেটা তার মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বেচ্ছায় ন্যায্যমূল্যে আমি আমার বাড়ি বিক্রি করেছি, অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে কেউ কেউ।”

নিজের দেশত্যাগের যে খবর ছড়ানো হয়েছে তাকে ‘কল্পকাহিনী’ আখ্যা দিয়ে অরুণ বলেন, তিনি বাংলাদেশে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে ভারতে গিয়েছিলেন।

তিনি জানান, গত ২০ অগাস্ট একমাত্র মেয়ে তুলি মজুমদারকে গুজরাট প্রদেশের বরোদার এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে ভর্তি করিয়েছেন। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গে দু-একদিন আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরে দেশে এসেছেন।

বাড়ি বিক্রির প্রেক্ষাপট ব্যাখা করে অরুণ গুহ বলেন, “বাড়ি বিক্রির চিন্তা ছিল আগে থেকেই। কারণ আমার নগদ টাকার প্রয়োজন ছিল বহুদিন ধরে। প্রায় একযুগ ধরে বাড়িটি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা ছিল। প্রতিবেশী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে বিক্রি করি। তার ওপর আমার অগাধ আস্থা।”

দুই পরিবারের মধ্যে প্রায় শত বছরের সম্পর্ক থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগে পরে যখনই আমরা কোনো বিপদে পড়েছি তখনই নুরু মিয়া চাচা, মোশাররফ ভাই ও তার অন্য ভাইয়েরা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। অন্য কাউকে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব দিতেও ইচ্ছে করেনি।

“যারা আমার পূর্ব পুরুষের জমির দিকে কুনজর দিয়েছিল তারা তো মোশাররফ সাহেবেরই বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি। সেই চক্র যখন আমায় নানাভাবে ভোগানোর চেষ্টা করেছে কই তখন তো কাউকে পাশে পাইনি খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার পরিবার ছাড়া।

“যারা কোনোদিন আমাদের কোনো কাজে আসেননি, বিপদে যাদের কোনোদিন পাশে পাইনি সেরকম কিছু লোক, গোষ্ঠী এখন বন্ধু সাজতে চাইছেন- এটা রহস্যজনক। আর মিথ্যা রটিয়ে, কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করে মোশাররফ ভাইয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টাকারীরা কার স্বার্থ হাসিল করতে চান?”

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জমি দখলের অভিযোগ তোলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন এভাবে যা খুশি তাই অভিযোগ করতে পারে? এটা কি কারো স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে?

“ওই সংগঠনের অপপ্রচারের কারণে যে মোশাররফ ভাইয়ের মতো একজন সুনামধারী রাজনীতিক, মন্ত্রীর সুনাম বিনষ্টের চেষ্টা করল কিছু লোক, তার কি হবে? কারো মিথ্যা তথ্যে প্ররোচিত হয়ে এভাবে বলাটা মোটেও উচিত হয়নি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের। কেউ এমন তথ্য দিলে তাদের উচিত ছিল, তা ভালোভাবে যাচাই করা।”

সংবাদ সম্মেলনে অরুণ গুহ মজুমদারের মেয়ে তুলি গুহ মজুমদার ও ভাগ্নি কল্পনা মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

</div>  </p>