ঢাকার দুই মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঢাকা দক্ষিণের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দোকান মালিক সমিতির পদ দখল করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও তাদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 02:05 PM
Updated : 29 August 2015, 02:52 PM

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজুর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ অভিযোগ করেন। শতাধিক ব্যবসায়ী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু কোনো নির্বাচন ছাড়াই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতির পদ দখল করে আছেন।

“এই সময়ের মধ্যে ওই মার্কেট দুটির এক হাজার ৭৮৮টি দোকানের মালিকদের কাছে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা নিয়েছেন। কোনো ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে না চাইলে তার দোকানে তালা ঝুলাচ্ছে মনজুর লোকজন।”

রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৮ জুলাই ওই মার্কেট থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব।

এ ঘটনার পর কাউন্সিলর মনজুর ‘সমর্থকদের’ হুঁমকি পেয়ে ব্যবসায়ী আজমল হোসেন, হাফিজুর রহমান, ফজলুল হক, সেন্টু চৌধুরী, আবু বকর ও তিনি নিজে ওয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান সাখাওয়াত হোসেন।

তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৯০ সালের পর থেকে ওই মার্কেটে সঠিকভাবে নির্বাচন হয় না। সেখানে আমি ২০১১ সাল থেকে ব্যবসায়ীদের ভোটে জিতেই মার্কেটটি পরিচালনা করছি।

“গত জুলাইয়েও ব্যবসায়ীরা আমাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী করেছে। আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক যেসব অভিযোগ তুলছে তার একটিও সঠিক নয়। রশিদ ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।”

ওই মার্কেটে ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মচারী রয়েছে জানিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনজু বলেন, “দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি তিনবার তাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। অথচ এই সময়ের মধ্যে কোনো খাতে চাঁদার পারিমাণ বাড়ানো হয়নি।”

তবে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজির’ বর্ণনা দিয়ে ব্যবসায়ী সাখাওয়াত বলেন, “এসি ব্লয়ার মেশিন কেনার নামে দোকানিদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ওই মেশিন কখনই পুরোপুরি চালু করা হয়নি। ওই খাত থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মনজু।”

(ফাইল ছবি)

সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দোকান মালিকদের কাছ থেকে বেশি হারে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিদ্যুতের বিল নিয়মিত পরিশোধ না করে সেই খাতের ৫৬ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ১৪ লাখ টাকা ও পানির বিল বাবদ ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।”

এছাড়া জেনারেটর বিল বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসে তিন লাখের বেশি টাকা নেওয়া হয়, যদিও লোডশেডিং তেমন না থাকায় এখাতে খরচ অনেক কম হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

সাখাওয়াত বলেন, “মার্কেটের ছোট-বড় চারটি জেনারেটরের মধ্যে তিনটি বিক্রি করে দিলেও এর টাকার কোনো হিসাব তিনি (মনজু) ব্যবসায়ীদের দেননি। রোজার মাসে জেনারেটর বিল বাবদ অতিরিক্ত ৩৫০ টাকা, দারোয়ানের পোশাকসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকেন। কিন্তু এর সব টাকা খরচ না করে কমিটির লোকজন নিজেদের কাছে রেখে দেয়।”