ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: নিহতদের মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশি

ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2015, 02:39 PM
Updated : 28 August 2015, 07:51 PM

বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের শার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক তিউনিসিয়া থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ছয়জনের মধ্যে অন্তত দুজন শিশু বলে জীবিত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা আমাদের জানিয়েছেন।”

দেশান্তরী প্রায় পাঁচশ মানুষকে নিয়ে ইটালি হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ার জোওয়ারা শহরের কাছে ভূমধ্যসাগরে বৃহস্পতিবার নৌকা দুটো ডুবে যায়।

এর মধ্যে প্রথম যে নৌকাটি থেকে সাহায্য চেয়ে সংকেত পাঠানো হয়, তাতে প্রায় একশ জন ছিলেন। আর ঘণ্টাখানেক পর ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকায় চারশর বেশি আরোহী ছিলেন বলে বিবিসির খবর।

রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা ইব্রাহিম আল আতৌশির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তারা এ পর্যন্ত ৮২ জনের মৃতদেহ পেয়েছেন। ১৯৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত অবস্থায়। এখনও ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন।

ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও মরক্কোর নাগরিক ছিলেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে তিউনিসিয়া থেকে। আর যে উপকূলে নৌকা ডুবেছে, সেই জোওয়ারায় আছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম।

টেলিফোনে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি নৌকায় মোট ৫৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে লাইফ জ্যাকেট থাকার কারণে।  

এই হিসেবে ওই নৌকার আরও দুজন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। তবে ডুবে যাওয়া অন্য নৌকায় কোনো বাংলাদেশি ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা পাননি।  

লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, উদ্ধারকর্মীরা নৌকা দুটি থেকে ১৯৮ জনকে উদ্ধার করতে পারলেও অনেকেই নৌকাডুবির সময় ভেতরে আটকে ছিলেন।

উদ্ধার করা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ত্রিপোলির পশ্চিমে সাবরাথায় একটি ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে। 

আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক নৌকা থেকে উদ্ধার ৩১ বাংলাদেশিকে লিবিয়ার পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে দুটি পরিবারকে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। অন্য বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও সহায়তা দেওয়া হবে।”

মোজাম্মেল হক জানান, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি পরিবার সিরত থেকে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দীর্ঘদিন ত্রিপলিতে থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তারা সিরতে সরে যেতে বাধ্য হন এবং ঝুঁকির কথা জেনেও সাগর পথে ইউরোপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনের ভয়ঙ্কর চেষ্টায় হাজারো মানুষের মৃত্যুর খবর গত দুই বছরে বহুবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই সাগরে ডুবে অন্তত ২ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।

জাতিসংঘ বলছে, এই সময়ে অন্তত এক লাখ অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইটালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। আরও এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ ইউরোপে ঢুকেছে গ্রিস হয়ে। 

গত বুধবার লিবিয়া উপকূলে দুর্ঘটনায় পড়া একটি জাহাজের খোলে ৫১ জনের লাশ পাওয়া যায়। ওই জাহাজ থেকে চারশর বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করে সুইডিশ কোস্ট গার্ড। ওইদিনই ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয় অন্তত তিন হাজার মানুষকে।     

এর আগে গত শনিবার লিবিয়া উপকূল থেকে ৪ হাজার ৪০০ অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। 

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল উদ্ধার বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তার দিকটি দেখভাল করছেন।  এছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য দূতাবাস একটি সেল খুলেছে দূতাবাস।