তিনি বলেছেন, “বর্তমান সরকার যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বোঝে না, তারা যে হিংসার রাজনীতি করে, তারা যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে- তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আজ দিল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জানাজায় না এসে।”
শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফরের এই জানাজা হয়, যিনি জিয়াউর রহমানের সরকারে শিক্ষামন্ত্রী এবং এরশাদের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মতবিরোধের কারণে ২০১৩ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর দলের একাংশকে নিয়ে জাতীয় পার্টি নামেই নতুন দল গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেন সাবেক এই চীনপন্থি বাম নেতা।
বৃহস্পতিবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান কাজী জাফর। শুক্রবার সকালে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে এক দফা জানাজার পর দুপুরের আগে তার কফিন জাতীয় সংসদ চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়।
কাজী জাফরের সাবেক দল ন্যাপ-ভাসানী, ২০ দলীয় জোটের শরিক জাগপাসহ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে প্রয়াত এই নেতার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে সাবেক এই সাংসদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কাউকে দেখা যায়নি।
সিপিবি পলিট ব্যুরোর সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হায়দার আকবর খান রনো, সাবেক মন্ত্রী মাইদুল ইসলাম মুকুল, সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল, বিএনপি নেতা আসম হান্নান শাহ, আহমেদ আজম খান, মনিরুল হক চৌধুরী, শাহ মো. আবু জাফর, নূর মোহাম্মদ খান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী, মোস্তফা জামাল হায়দারসহ সংসদের কর্মচারীরা এ জানাজায় অংশ নেন।
তবে আওয়ামী লীগ বা তাদের শরিক জোট এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা বা সংসদ সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।
মৃত ব্যক্তির কোনো ‘শত্রু থাকে না’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “দেশবাসী নিশ্চয়ই এ সরকারের নিন্দা জানাবে।”
সিপিবি নেতা হায়দার আকবর খান রনো বলেন, “কাজী জাফর আহমদ এদেশের ছাত্র আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে নুতন দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছিলেন। এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকাও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।”
মুক্তিযুদ্ধে কাজী জাফরের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই মন্তব্য করে এই বাম নেতা বলেন, “আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমি, রাশেদ খান মেনন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, কাজী জাফর আহমদ- সকলে মিলে আমরা বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিতে ছিলাম। আমাদের ১৪টি মুক্ত এলাকা ছিল। আমাদের অধীনে যে সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছিল, তাতে শতাধিক শহীদ হয়েছিলেন। আমাদের প্রায় ৪০ হাজার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ছিল।”
সংসদ চত্বরে জানাজা শেষে কাজী জাফরের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের নেতা দীলিপ বড়ুয়া।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ২০ দল থেকে বেরিয়ে আসা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির একাংশের নেতা শেখ শওকত হোসেন নিলু, আলমগীর মজুমদার, বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, কাজী মুনিরুজ্জামান, কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এখানে জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে কাজী জাফরের ছোট মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কাজী রুনার স্বামী আলতাস কবীর তার শ্বশুরের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে কাজী জাফরের মরদেহ নেওয়া হয় গুলশানে। বিকালে গুলশানের আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজার পর কফিন তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রয়াত এই রাজনীতিবিদের সহকারী গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শনিবার সকাল ১১টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে, জোহরের পর চৌদ্দগ্রাম হাই স্কুল মাঠে এবং আসরের পর চিওড়া কলেজ মাঠে স্যারের জানাজা হবে। স্যারের ছোট মেয়ে কাজী রুনা আজ মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন। এরপর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
চিওড়ায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের কবরের পাশে কাজী জাফরকে দাফন করা হতে পারে বলে এর আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।