৫৭ ধারা নিয়ে ১১ শিক্ষক-লেখকের উকিল নোটিস

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে সরকারের তিন সচিবকে উকিল নোটিস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখকসহ ১১ ব্যক্তি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2015, 05:35 AM
Updated : 27 August 2015, 12:34 PM

২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে নোটিসের জবাব দিতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিসে সতর্ক করা হয়েছে।

আলোচিত ৫৭ ধারা নিয়ে এক ব্যক্তির রিট ও এক আইনজীবীর উকিল নোটিস পাঠানোর পরদিন বৃহস্পতিবার নতুন এই নোটিস পাঠানো হল।

১১ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া রেজিস্ট্রার ডাকে ওই নোটিস পাঠান।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে তার এই নোটিস পাঠানো হয়েছে।

“এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।”

নোটিসদাতা ১১ জন হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন ও ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞানের সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, ঢাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী ও লেখক রাখাল রাহা।

নোটিসে বলা হয়, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত মত প্রকাশের স্বাধীনতার অঙ্গীকারের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক।

এ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা।

২০০৬ সালে পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, এ আইনে ২০১৩ সালে তিনটি মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালে ৩৩টি এবং ২০১৫ সালে ৩৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

এসব মামলার মধ্যে নয়টির বিচার শেষ হয়েছে, যার চারটিতে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর পাঁচটি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

বর্তমানে ৬০টি মামলা ঢাকার সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বলে জানান এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, “৫৭ ধারাকে বিরুদ্ধ মত দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অপব্যবহার রোধে ধারাটির বিলুপ্তির জন্য আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।”

সম্প্রতি ফেইসবুকে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে এক সাংবাদিককে এ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা গ্রেপ্তারের ওই ঘটনাকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ‘অপব্যবহার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকেও ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।