দুই স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীর নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিজড়িত খুলনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিলনায়তনের নাম থেকে দুই স্বাধীনতাবিরোধীর নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2015, 11:22 AM
Updated : 25 August 2015, 02:56 PM

খুলনা মহানগরীর ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ব্যবহার করতে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ মিলনায়তনের নামও প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

একটি আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

দুই স্বাধীনতাবিরোধীর নাম প্রত্যাহার চেয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবির রোববার এই আবেদন করেন।

আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক।

মুসলিম লীগের নেতা খান-এ-সবুর পাকিস্তান আমলে ছিলেন আইয়ুব খানের মন্ত্রী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে বিচার শুরুর সময় প্রকাশিত ছয়শ স্বাধীনতাবিরোধী অপরাধীর তালিকাতেও তার নাম ছিল।

সেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের নামেই পরে যশোর রোডের নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত এই সড়ক ধরেই একাত্তরে লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। তাদের দুর্দশা দেখেই আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’, যা সে সময় বিশ্বকে নাড়া দেয়।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এই সড়ক হয়েই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে শত্রুমুক্ত যশোরে পৌঁছান। 

জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানও ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৭২ সালে তাকেও দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তার নামেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিলনায়তনের নামকরণ হয়।

স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামোর নামকরণ স্থগিত চেয়ে ২০১২ সালে হাই কোর্টে একটি রিট করেছিলেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীর।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ মে রুলসহ খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম ব্যবহার স্থগিতের অন্তর্বতীকালীন আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

সেসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সেসবের নামকরণ কেন করা হবে না এবং যারা ওই নামকরণের জন্য দায়ী, তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

আদালতের ওই নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না জানিয়ে রোববার বিভিন্ন স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম প্রত্যাহারের এই আবেদন করেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবির। 

এ বিষয়ে শুনানি করে আদালত দুটি নাম প্রত্যাহারের এই নির্দেশ দেয়।

আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী এ কে রাশেদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্ট তাদের (স্বাধীনতাবিরোধী) নাম ব্যবহার স্থগিতের আদেশ দিয়েছিলেন। তবে আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন হচ্ছে না দেখা যাচ্ছে।

“এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। তাদের নামে স্থাপনার নামকরণ ও তা ব্যবহারের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে। এতে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব কারণে আবেদন করা হলে আদালত তাদের নাম প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছে।”

অন্তর্বর্তীকালীন এই আদেশ রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানান তিনি।