গাজীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বাড্ডার ‘সন্ত্রাসী’

গাজীপুরের দক্ষিণ সালনায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, যিনি তিনটি হত্যা মামলার আসামি। 

আবুল হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2015, 03:56 AM
Updated : 21 August 2015, 03:27 PM

নিহত সাইদুর রহমান (৩৫) ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার শিমুলতলা এলাকায় মো. জৈমত উল্লাহর ছেলে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকায় তাদের পোল্ট্রি ফার্ম এবং বাড্ডায় মুদি ও লন্ড্রির দোকান রয়েছে।

পুলিশ সাইদুরকে ঢাকার বাড্ডা এলাকার একজন ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ বললেও পরিবারের দাবি, তিনি এলাকায় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  

সাইদুরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ ৫২ হাজার টাকা নিয়েছিল বলেও দাবি করেছেন সাইদুরের বড় ভাই মিজানুর রহমান।  

বাড্ডার তিন খুনের ঘটনায় সাইদুর জড়িত ছিলেন কি-না সে প্রশ্ন পুলিশ এড়িয়ে গেলেও এর আগে সংবাদ মাধ্যমে স্থানীয়দের সন্দেহভাজন হিসেবে তার নামও এসেছিল। 

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমির হোসেনের ভাষ্য, তিন হত্যা মামলার আসামি সাইদুরকে ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে’ বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক করেন তারা। পরে তার বক্তব্য অনুযায়ী সালনা এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

“জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য মধ্যরাতে অভিযানে বের হয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। দক্ষিণ সালনা এলাকায় একটি জঙ্গলের কাছে পৌঁছালে সেখানে ওঁত পেতে থাকা সাইদুরের সহযোগীরা গুলি করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে সাইদুর গুলিবিদ্ধ হয়।”

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান ওসি। 

এ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুস সালাম সরকার জানান, গোয়েন্দা পুলিশ রাত ১২টা ১০ মিনিটে সাইদুরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মিনিট পনের পর তার মৃত্যু হয়।

ওসি আমির হোসেন বলেন, “সাইদুর একজন পেশাদার খুনি। গাজীপুরের এক আইনজীবী খুন এবং ঢাকার বাড্ডা থানায় দুটি হত্যা মামলার আসামি তিনি।”

‘বন্দুকযুদ্ধে’ গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানান আমির।

পুলিশ সাইদুরকে বৃহস্পতিবার বিকালে আটক করার কথা বললেও পরিবারের দাবি, একদিন আগেই তাকে ধরা হয়েছিল।

নিহতের বড় ভাই মো. মিজানুর রহমান বলছেন, বুধবার বাড্ডার বাসা থেকে মো. শাহজাহান (৩০) ও রানা (১৫) নামের দুজনকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে শ্রীপুরে নিজের পোল্ট্রি খামারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সাইদুর। বিকেলে দক্ষিণ সালনা এলাকায় মোটর সাইকেলে গোলযোগ দেখা দিলে স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে সারাই করতে নেন।

“সেখানে ডিবি পুলিশ তাদের আটক করে। পরে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রানা ও শাহজাহানকে ছেড়ে দিলেও সাইদুরকে আটকে রাখে।”

মিজানুরের দাবি, পুলিশ সাইদুরের মুক্তির জন্য পাঁচ লাখ টাকা দবি করে। বিষয়টি বাসায় জানালে তাদের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান গাজীপুরে যান।

“তাদের কথা মত এসপি অফিসের উত্তরে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় যায় হাবিব। সেখানে এক এসআইয়ের সাথে ৫২ হাজার টাকায় রফা হয়। সাইদুরকে শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেবে বলেছিল তারা।”

কিন্তু শুক্রবার ভোরে পুলিশের গুলিতে ভাইয়ের নিহত হওয়ার খবর পান মিজানুর। পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে সাইদুরের লাশ শনাক্ত করেন।

টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কত কথাই বলবে...।”

গত ১৩ অগাস্ট রাতে বাড্ডার আদর্শনগর পাম্পের কাছে ঢাকা মহানগর (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসু মোল্লাসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় সাইদুর জড়িত ছিলেন কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “এটা বাড্ডার পুলিশ বলতে পারবে।”

বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলা আছে। সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পুলিশ তাকে খুঁজছিল।”