‘১৯ বার ব্যর্থতার পরও হাসিনার শত্রুরা সক্রিয়’

প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তার একজন মুখপাত্র বলেছেন, হত্যাচেষ্টাকারীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে।  

সুমন মাহবুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2015, 05:33 PM
Updated : 20 August 2015, 07:55 PM

একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ১১ বছর পূর্তির আগের দিন বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেত্রীকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।”

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে মিছিলে গুলিবর্ষণ থেকে শুরু করে বাসভবনে গুলিবর্ষণ এবং ‘বিষক্রিয়ার মতো ঘটনাগুলোর’ কথা স্মরণ করেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাহচর্যে কাটানো শাকিল।    

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনকের দুই কন্যা দেশের বাইরে থাকাতে প্রাণে বেঁচে গেলেও বারবার প্রধানমন্ত্রীর জীবননাশের চেষ্টা করা হয়েছে।”

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তৎকালীন ৮ দলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পুলিশ ও বিডিআরের গুলিতে ৭ জন নিহত ও তিন শত আহত হয়।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা (সংগৃহীত ছবি)

শাকিল বলেন, “১৯৮৯ সালের ১১ অগাস্ট মধ্যরাতের দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন বাসভবনে ছিলেন। হামলাকারীরা বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালায় ও একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।”

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাকিল বলেন, ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে টুঙ্গীপাড়া থেকে ঢাকায় ফিরে উপ-নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর গ্রিন রোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান শেখ হাসিনা। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির কর্মীরা গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রেল গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

আরেকটি ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কোয়ারের কাছে সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তার উপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।”

১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশের কথা তুলে ধরে শাকিল বলেন, “সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পরপরই হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়।”

১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র-কন্যাসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণার ই-মেইলটি পাঠানোর অভিযোগে জনৈক শোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়েরের কথাও মনে করিয়ে দেন মাহবুবুল হক শাকিল।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে।

২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জঙ্গি সংগঠন হুজি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে বোমা পুঁতে রাখে বলেও জানান শাকিল।

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট গিয়েছিলেন। সেদিন রাত ৮টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়।

২০০২ সালের ৪ মার্চ যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার গাড়িতে হামলা চালায়।

২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালায়।

২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সাবজেলে রেখে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তখনই অভিযোগ করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে শাকিল বলেন, “আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তারিখে অন্যায়ভাবে বিনা ওয়ারেন্টে সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেপ্তার করেছিল। সে সময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত পয়জন দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।

“স্লো পয়জনিংয়ের কারণে সেখানে আটক থাকাকালে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।”

ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্য দেশের বাইরের সন্ত্রাসীদেরও ভাড়া করার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান শাকিল।

তিনি বলেন, “২০১১ সালে দেশের বাইরের একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সেজন্য আগাম পেমেন্টও করা হয়। তবে,দেশের বাইরে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ওই সন্ত্রাসী দলটি মারা যায়।”

২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছিল, যা ব্যর্থ হয়ে যায় বলেও জানান শাকিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গি শাহানুর আলমের স্বীকার করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কাওরানবাজারে তার গাড়িবহর লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিগোষ্ঠী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে গেলেও ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে নেমে এতবার মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন শেখ হাসিনা।

১৫ অগাস্ট ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছিলেন, পঁচাত্তরের মতো ঘটনা ঘটাতে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।

এই প্রেক্ষাপটেই এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, জীবনের পরোয়া তিনি করেন না।