অভিজিৎ-অনন্ত হত্যায় ‘একই দল’

ঢাকায় একুশে বই মেলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে যে পাঁচ জন অংশ নিয়েছিলেন, আড়াই মাস পর সিলেটে অনন্ত বিজয় দাসকে হত্যায়ও একই দল অংশ নেয় বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 02:08 PM
Updated : 18 August 2015, 04:02 PM

ওই দলের তিন জনের দায়িত্ব ছিল লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ করা। আর তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে বাকিরা।

সোমবার তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। 

গ্রেপ্তাররা হলেন- তৌহিদুর রহমান (৫৮), সাদেক আলী মিঠু (২৮) ও আমিনুল মল্লিক (৩৫)। তৌহিদুর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, যাকে অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মুফতি মাহমুদ খান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে নীলক্ষেত এলাকা থেকে মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তৌহিদ এবং আমিনুলকে।

তিনি বলেন, “অভিজিৎ হত্যার ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা আগে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের মহসীন হলের মাঠে রমজান, নাঈম, সাদেক, জুলহাস এবং জাফরান নামে পাঁচ জন জড়ো হয়েছিলেন। রমজান, নাঈম চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে অভিজিৎকে।

“একইভাবে পাঁচ জনের এই দলটি সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে হত্যা করে।”

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাদেককে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলে তিনি দাবি করেন, দুটি হত্যাকাণ্ডেই তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুটি ঘটনার সময় তিনি ঢাকায় বোনের বাসায় ছিলেন।

সাদেক ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে জানান মুফতি মাহমুদ খান।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। একই সময় ঘাতকদের কোপে আঙ্গুল হারান তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।

আর গত ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনার ব্লগার ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশকে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানি কারাগার থেকে সকল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ছোট ভাই আবুল বাশার নিয়মিত কারাগারে গিয়ে রাহমানির সাথে দেখা করেন। একইভাবে দেখা করেন সাদেক আলী মিঠু।

“এদের মাধ্যমেই তথ্য যেতো তৌহিদুর রহমানের কাছে এবং পরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।”

তিনি জানান, সাদেক বই প্রকাশনায় যুক্ত। রাহমানির বই প্রকাশ করতে গিয়েই তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে। এছাড়া আমিনুল মল্লিক পাসপোর্টের দালাল এবং রাহমানির ভক্ত।

র‌্যাবের দাবি, আমিনুলের মাধ্যমেই ভুয়া নাম দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে কৌশলে দেশের বাইরে চলে যেত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিপদগ্রস্ত সদস্যরা।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এই দুই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তাদের কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান দিয়ে আসছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান, যিনি একসময় বাংলাদেশ বিমানে চাকরি করতেন।

অভিজিৎ ও অনন্ত হত্যাকাণ্ডের পর তৌহিদুর রহমানের নির্দেশে সাদেক, জুলহাস এবং জাফরান অনলাইনে হত্যার দায় স্বীকার করে অনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে পোস্ট দিত বলেও জানান তিনি।