প্রবীর সিকদারের পাশে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে আইনি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 01:32 PM
Updated : 18 August 2015, 03:40 PM

বামপন্থি আইনজীবীদের সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার একথা জানানো হয়।

সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ আখতার-উল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মকবুল আহমেদ ও বিশ্ব গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী এক বিবৃতিটি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, একজন নাগরিকের আইনি সহায়তা পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে এই অধিকারের কথা স্বীকৃত।

“একজন নির্ভিক ও প্রগতিশীল সাংবাদিক হিসাবে প্রবীর সিকদার ও তার পরিবার যে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে, তা মোটেই কাম্য নয়। আইনের শাসন রক্ষা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি প্রবীর সিকদারের পাশে আছে ও থাকবে।”

শেখ আখতার-উল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটি পর্যালোচনা করছি। হাই কোর্টে তার (প্রবীর) জামিনের আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

এছাড়া ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি এবং প্রবীর সিকদারের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির নেতারা।

প্রয়োজনে ফরিদপুর যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান শেখ আখতার।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে নিয়ে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর তথ্য প্রযুক্তি মামলায় রোববার ঢাকায় গ্রেপ্তার প্রবীর সিকদারকে মঙ্গলবার তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠায় ফরিদপুরের আদালত।

ফরিদপুরে একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীরের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ওই জেলার এক আইনজীবী। সোমবার প্রবীরের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও মঙ্গলবার একজন শুনানি করেন তার পক্ষে।

ক্র্যাচে ভর করে মঙ্গলবার ফরিদপুরের আদালতে যাচ্ছেন প্রবীর সিকদার

ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার।

কিন্তু পুলিশ ওই জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা বলেন এই সাংবাদিক।

‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”

এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রোববার রাতে ফরিদপুর সদর থানায় মামলা করেন আইনজীবী স্বপন পাল।  

প্রবীর সিকদার এর আগে ঢাকায় সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।

দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্বপালনকালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকেই পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়েছিল বলে প্রবীরের অভিযোগ।

এই সাংবাদিককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় চলছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চও।

সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ বিভিন্ন সংগঠন অবিলম্বে প্রবীর সিকদারকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।