গর্ভস্থ শিশু গুলিবিদ্ধের আসামি আজিবর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

মাগুরায় আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার মামলার অন্যতম প্রধান আসামি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। 

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2015, 08:00 PM
Updated : 16 Sept 2015, 07:09 PM

নিহত মেহেদী হাসান আজিবর ওরফে অজিবর শেখ এই মামলার ৩ নম্বর আসামি। গত ২৩ জুলাই সংঘর্ষের সময় তার ছোড়া গুলিতেই একজন নিহত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগমও গুলিবিদ্ধ হন।

আজিবর এক সময় পৌর ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ছিলেন। তার বাবা আবদুল মালেক আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। ৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বোমা বানাতে পারদর্শিতার কারণে মাগুরায় তিনি ‘বোমা মালেক’ হিসেবে পরিচিত।

পলাতক আজিবর ধরা পড়েছেন বলে সোমবার মাগুরায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ সেই খবর স্বীকার করেননি।

মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে পুলিশ জানায়, রাত ১টার দিকে জেলা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় আজিবর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

মাগুরার পুলিশ সুপার এহসান উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “আজিবরসহ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ দোয়ারপাড় এতিমখানা এলাকায় অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশের কয়েকটি দল সেখানে যায়।

“সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থলে আজিবর শেখের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।”

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেন এহসান উল্লাহ।

মেহেদী হাসান আজিবর ওরফে অজিবর শেখ

গুলিবিদ্ধ নাজমার দেবর কামরুল ভূইয়ার সমর্থকদের সঙ্গে এলাকার আধিপত্য নিয়ে গত ২৩ জুলাই জেলা শহরের দোয়ারপাড়া এলাকায় সংঘর্ষ বাঁধে আজিবর ও মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের। এতে কামরুলের চাচা মোমিন ভূইয়া নিহত ও ভাবি নাজমা গুলিবিদ্ধ হন।

নাজমার গর্ভস্থ সন্তানও গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গুলির দাগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত। মা ও মেয়ে দুজনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার ১৬ আসামির মধ্যে পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলীসহ ৬ জনকে এখনও ধরা যায়নি।

এই ঘটনায় মোমিনের ছেলের দায়ের করা মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সেন সুমন গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে গত ২ আগস্ট সেন সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে মামলার পাঁচ নম্বর আসামি সুমন করিগর ও ১২ নম্বর আসামি সোবাহানকে পুলিশ এক রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

আজিবর ২০০৩ সালে পৌর ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন; যদিও স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই পাড়ায় বসবাস এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় কামরুল, আলী ও আজিবর সব সময় এক সঙ্গেই চলাফেরা করতেন। কিন্তু স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে কামরুলের সঙ্গে আজিবরের দূরত্ব তৈরি হয়।

ঠিকাদারি নিয়ে আজিবর দূরে সরে গেলে কামরুল ও আলীর নেতৃত্বে একটি দল বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল-বেদখল, দালালি, চাঁদাবাজি ও মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়েন বলে স্থানীয়রা জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এজন্য তারা ব্যক্তি স্বার্থে সব সময় জেলার রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে থাকেন। বিএনপি থাকলে বিএনপি, আওয়ামী লীগে থাকলে আওয়ামী লীগ।”

চার মাস আগে ভাগাভাগি নিয়ে আলীর সঙ্গে কামরুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তখন আজিবরের সমর্থন পান আলী। এরপর আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষের ছোট-খাটো সংঘাত চলছিল। এরপর গত ২৩ জুলাই তা বড় সংঘাতে রূপ নেয়।

আজিবরের ভাই মজিবর বিএনপি আমলে স্থানীয় যুবদলের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গেই চলাফেরা করতেন বলে স্থানীয়রা জানায়। মজিবরও এই মামলার আসামি।