মুদ্রাপাচার আইনে আসছে যৌথ তদন্তের সুযোগ

অর্থদণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ ও একাধিক সংস্থার যৌথ তদন্তের সুযোগ রেখে মুদ্রাপাচার আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2015, 09:58 AM
Updated : 17 August 2015, 11:08 AM

সেই সঙ্গে মুদ্রাপাচারের ক্ষেত্রে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের ভার দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে রেখে দুদক আইনও সংশোধন করা হচ্ছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধন) আইন-২০১৫’ এবং ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৫’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, “মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকেও শক্তিশালী করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, ২০১২ সালের মুদ্রাপাচা্র আইনে ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংশোধিত আইনেও তা একই থাকছে। পরিবর্তন আনা হচ্ছে অর্থদণ্ডে।

বিদ্যমান আইনে পাচার হওয়া অর্থের কমপক্ষে দ্বিগুণ অথবা ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি হবে- সেই পরিমাণ জরিমানার কথা বলা আছে। এই অংক বাড়িয়ে ১০ লাখের জায়গায় ২০ লাখ টাকা করা হচ্ছে।

বর্তমান আইনে মুদ্রাপাচারের ঘটনা তদন্তের সার্বিক দায়িত্ব দেওয়া ছিল দুদকের ওপর। কোনো ক্ষেত্রে দুদক অন্য কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে তারপর তারা এ তদন্তে যুক্তি হতে পারত।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত মুদ্রা পাচারের ঘটনা ঘটলে তা তদন্তের দায়িত্ব দুদকের হাতে থাকবে। 

অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তদন্তের দায়িত্ব নেবে বলে জানান সচিব।

“যেমন, অনেকগুলো পুলিশ করবে। যেগুলো কাস্টমস রিলেটেড সেগুলো এনবিআর করবে, যেটা মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত, সেটা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর করবে। এটা আইনে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি।

মুদ্রাপাচার আইনে দুদকের ভার লাঘব করে দুদক আইনেও সংশোধনী আনা হচ্ছে।  

সচিব বলেন, “দুর্নীতি দমন আইনের তফসিলে এখন বলা আছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন অপরাধসমূহ। এখানে সংশোধন করে বলা হয়েছে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধসমূহ।”

মন্ত্রিসভার গত বৈঠকে ‘দুনীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আর সোমবার মুদ্রাপাচার আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদনের পর দুদক আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।   

বিদ্যমান মুদ্রাপাচার আইনে যৌথ তদন্তের বিধান না থাকলেও সংশোধনের খসড়ায় তা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রয়োজনে একাধিক সংস্থা যৌথভাবে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে। 

এর ব্যাখ্যায় মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, “তদন্তকারী দলের বিধান ছিল না। এখন সেটা সৃষ্টি করা হয়েছে। কারণ মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টা খুব জটিল। মানিলন্ডারিংয়ের অর্থে অন্য কোন অপরাধ যেমন, খুন হয়েছে ইত্যাদি, সেক্ষেত্রে যৌথ তদন্ত দলের প্রয়োজন থাকতে পারে।

“যার মধ্যে হয়তো পুলিশের লোক থাকবে, এনবিআরের লোক থাকবে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক থাকবে। কাজেই যেখানে প্রয়োজন যৌথ তদন্ত দল করা যাবে। সেই বিধান যুক্ত করা হয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে এ আইনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, তাদের ‘আরও ক্ষমতা’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

“এখন যেটা আছে, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা অঙ্গ। ডেপুটি গভর্নরদের একজন এই ইউনিটের প্রধান হিসাবে কাজ করেন। একজন নির্বাহী পরিচালক সহকারী প্রধান হিসাবে কাজ করেন। অন্য যারা আছেন, তারাও বাংলাদেশ ব্যাংকের।”

ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ইউনিটকে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলার উদাহরণ টেনে সচিব বলেন, “আমাদের একটা কমিটি আছে, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটি। ভারতের কমিটির নাম ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল। এটার প্রধান হচ্ছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। ভারতের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতার বাইরে, স্বতন্ত্র সংস্থা। তারা সরাসরি কাউন্সিলের কাছে রিপোর্ট করে।

“প্রস্তাবিত আইনে মাঝামাঝি একটা অবস্থান স্থির করা হয়েছে। আসলে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান কার্যকর করতে সময় লাগে। এটা খুব ভালো হবে না। কাজেই আইনে বিধান রাখা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতার মধ্যে একটা অপারেশনারল অটোনমি থাকবে। ফাংশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্স থাকবে। অর্থ্যাৎ কার্যক্ষেত্রে তারা অনেকটাই স্বাধীনতা ভোগ করবে।”

আইন সংশোধনের পর বাংলাদেশে এ ইউনিটের প্রধান নিয়োগ দেবে সরকার। তিনি হবেন ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদার কেউ। সার্চ কমিটি গঠন করে এই নিয়োগ দেওয়া হবে, যে কমিটিতে গভর্নরও থাকবেন বলে জানান সচিব।

“সংস্থার প্রধান যথেষ্ট অটোনমি নিয়ে এটা পরিচালনা করবেন। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের আওতাধীন থাকবেন। অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গভর্নর নিয়োগ করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নয়।”

ইউনিটের প্রধান গভর্নরের মাধ্যমে জাতীয় কমিটির কাছে রিপোর্ট করবেন। তিনি নিয়োগ পাবেন চার বছরের মেয়াদে। সরকার ইচ্ছা করলে আরও এক মেয়াদের জন্য তাকে নিয়োগ দিতে পারবে।

এই সংস্থায় কেন্দ্রীয় বাংকের বাইরে থেকেও লোক নিয়োগের সুযোগ থাকবে জানিয়ে সচিব বলেন, “এখানে দক্ষ লোক প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে পুলিশের লোক দরকার হতে পারে, সেখানে এনবিআরের লোক দরকার হতে পারে, অন্য ব্যাংকের লোক দরকার হতে পারে।”

এ ধরনের ক্ষেত্রে ইউনিটের প্রধান গভর্নরের মাধ্যমে সরকারকে অনুরোধ করবে এবং সরকার সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ‘ডেপুটেশনে’ পাঠাবে বলে জানান সচিব।