ভিন্নমতের কণ্ঠ রোধে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে কুপিয়ে হত্যার পর ভিন্নমতের কণ্ঠ রোধের লক্ষ্যে এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2015, 05:25 PM
Updated : 7 August 2015, 05:25 PM

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই পূর্ব গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলার বাসায় নিলয়কে হত্যা করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পর এক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধের লক্ষ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘৃণ্য অপরাধ এবং কোনোভাবেই এগুলো সহ্য করা হবে না মর্মে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।”

সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গবেষণা পরিচালক ডেভিড গ্রিফিথ বলেন, “এ ধরনের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। স্বাধীন মতপ্রকাশের কণ্ঠরোধ করতেই যে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে- তা মোটামুটি নিশ্চিত এবং এটি অগ্রহণযোগ্য।”

গ্রিফিথ বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীন চর্চাকে কোনোভাবেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের আক্রমণ বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

“স্বাধীন, কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব ঘটনার তদন্ত করে নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

নিলয় গত দুই বছর ধরে গোরানের ওই বাসায় থাকতেন; তিনি কাজ করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ব্লগার ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন নিলয় নীল নামে।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে মিরপুরে বাসার কাছে সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একই কায়দায় জঙ্গি হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়।

৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

তার এক মাসের মাথায় সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে একই ধরনের হামলায় খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এর আগে সবগুলো ঘটনাতেই রাস্তায় হামলা হলেও ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হল তার বাসায় ঢুকে। তাকে যে মাঝেমধ্যেই অনুসরণ করা হচ্ছিল, তা তিনি ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন গত ১৫ মে। 

এই বিষয়ে পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে গেলে পুলিশ উল্টো নিলয়কে তাড়াতাড়ি বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেয় বলে ওই পোস্টে তিনি লেখেন।

গত কিছুদিন ধরে হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে ফেইসবুক থেকে নিজের সব ছবি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের বদলে লিখেছিলেন ভারতের কলকাতার নাম।